Advertisement
E-Paper

মাথাভাঙায় ধর্ষণে ধৃত দুই, পাড়া নির্যাতিতাদের পাশেই

আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল কোচবিহারের মাথাভাঙায় দুই কিশোরীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই যুবক টোটন সরকার ও রুদ্র তালুকদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২০
আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার অভিযুক্তরা। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার অভিযুক্তরা। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল কোচবিহারের মাথাভাঙায় দুই কিশোরীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই যুবক টোটন সরকার ও রুদ্র তালুকদার। সোমবার বিকেল ৩টে নাগাদ পুলিশ সাদা পোশাকে গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। তারপরে কিছুটা হলেই স্বস্তি ফিরেছে নির্যাতিতা দুই কিশোরীর বাড়িতে।

পাশাপাশি দু’টি পরিবারই শোকে কাতর হয়ে রয়েছে। চিকিৎসাধীন কিশোরীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। গোটা পাড়াই দুই কিশোরীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার রাতে মাথাভাঙার ওই দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। দুই কিশোরী সম্পর্কে পিসি ভাইঝি। চিকিৎসাধীন কিশোরী এ দিন বলে, “বাড়ির সামনে দীপাবলির আলো জ্বালাচ্ছিলাম। সেই সময় এক যুবক আমাকে মুখ চেপে জোর করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে দেখি, সারা শরীরে মাটি লেগে রয়েছে।” ওই কিশোরীর বক্তব্য, তার ভাইঝিকেও টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরে কোনওমতে বাড়িতে ফিরে তারা সব কথা বলে। তারপরে একজন আত্মহত্যা করবে বলে কীটনাশক খেয়ে নেয়। সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন, রবিবার দুপুরে আর এক কিশোরী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়। দু’জনেই নবম শ্রেণির ছাত্রী।

তবে ওই দুই কিশোরী রাতে বাড়িতে সব কথা বলার পরে তাদের বকাবকি করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুই বাড়ির লোকই অবশ্য জানিয়েছেন, বকাবকি করা হয়নি। মনস্তত্ত্ববিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সামাজিক অবস্থাটাই এমন যে, কোনও নারীর যৌন সম্পর্কের ইতিহাস তার জীবনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তারা ধর্ষিতা হয়েছে এটা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরে লজ্জায় আর মুখ দেখাতে পারবে না। তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।’’

উদ্বেগ ছড়িয়েছে অভিভাবক মহলেও। গোটা কোচবিহারেই কোনও ‘ট্রমা সেন্টার’ নেই। তবে কোচবিহার হাসপাতালে মনস্তত্ত্ববিদ রয়েছেন। এমনকী, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পর্যন্ত ট্রমা সেন্টারের পরিকাঠামো থাকলেও তা এখনও শুরু করা যায়নি। মানসিক রোগের চিকিৎসক স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “এ ধরনের ঘটনা এক দিকে যেমন গভীর মানসিক অবসাদ তৈরি করে, অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডারও হতে পারে।’’ তাঁর মতে, নির্যাতিতার সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে, তা নিয়ে অভিভাবক ও পড়শিদেরও ধারণা থাকা দরকার। এলাকার প্রাক্তন শিক্ষক বিমান ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের সমাজে একবার কেউ ধর্ষিতা বলে জানাজানি হয়ে গেল, তার পক্ষে সেটা খুবই লজ্জাজনক হয়। ওরা হয়তো এরপরে স্কুলে যেতেও লজ্জা পেত। এই অবস্থাটা দূর করতে সবাইকে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’’ কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথনের বক্তব্য, সরকার কন্যাশ্রী ও সর্বশিক্ষা মিশনের মাধ্যমে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা করি। মেয়েরা যাতে এমন অবস্থায় না পড়ে ও পড়লেও তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তার জন্য প্রশাসন সব সময়ই তাদের পাশে থাকে।

দুই ছাত্রীরই বাড়ির লোকের দাবি, অভিযুক্ত যুবকেরা তাদের পড়শি হলেও তাদের সঙ্গে ওই দুই কিশোরীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। তাদের জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই কিশোরীদের সঙ্গে দুই যুবকের সম্পর্ক ছিল। সে কারণেই তারা বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে গিয়েছিল। অভিযুক্তদের বাড়ির লোক অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের বাড়ির ছেলেদের ফাঁসানো হয়েছে। গ্রামের লোকও স্তম্ভিত। দুই যুবককেই তারা ভাল ছেলে বলে চিনতেন।

এদিন অবশ্য দলমত নির্বিশেষে নেতা-জনপ্রতিনিধিরা দুই বাড়িতে গিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। অসুস্থ কিশোরী যাতে ভেঙে না পড়ে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, সে জন্য সব দলের নেতাই যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

Rape 2 Accused Arrested coochbehar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy