Advertisement
E-Paper

দলীয় নির্দেশে বৈঠক তৃণমূলের যুযুধান দু’পক্ষের

দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে সিঙ্গুর নিয়ে অস্বস্তি সামনে এসেছে। ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরে সেই অস্বস্তি আরও বাড়ছিল সেখানকার দুই নেতার কাজিয়া ঘিরে। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে রবিবার দু’পক্ষ বৈঠকেও বসল। দু’পক্ষই দাবি করল, সমস্যা মেটার পথে। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত বরফ কতটা গলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেল অনেক সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মনে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৯

দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে সিঙ্গুর নিয়ে অস্বস্তি সামনে এসেছে। ভোটের মুখে তৃণমূলের অন্দরে সেই অস্বস্তি আরও বাড়ছিল সেখানকার দুই নেতার কাজিয়া ঘিরে। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে রবিবার দু’পক্ষ বৈঠকেও বসল। দু’পক্ষই দাবি করল, সমস্যা মেটার পথে। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত বরফ কতটা গলবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেল অনেক সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মনে।

এত দিন সিঙ্গুরে বিদায়ী কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকানোর অভিযোগ তুলছিলেন বিদায়ী মন্ত্রী তথা এ বারের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের অনুগামীরা। শুক্রবার রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে তাঁদের
আমন্ত্রণ না-জানিয়ে এক বিজেপি নেতা
এবং দুর্নীতির দায়ে তৃণমূল থেকে ‘বহিষ্কৃত’ এক নেত্রীকে নিয়ে এলাকার একটি ক্লাবে সভা করার অভিযোগ তোলেন বেচারামবাবুর অনুগামীরা। বিহিত চাইতে দলের ব্লক সম্পাদক গণেশ চক্রবর্তী সে দিনই রাজ্য নেতৃত্বের দ্বারস্থ হন। এর পরেই শীর্ষ নেতৃত্ব দু’পক্ষকে সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

রবিবার বেচারামের স্ত্রী তথা সিঙ্গুর থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য করবীদেবী, দলের ব্লক সহ-সভাপতি হারাধন ঘোষ, বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান
দুধকুমার ধাড়া ও তাঁদের অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথবাবু এবং তাঁর অনুগামীরা। ওই ব্লকে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়।

দলেরই একটি সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতে নির্বাচনী কমিটিতে মাস্টারমশাইয়ের প্রস্তাবিত দু’টি নাম এবং আগের কমিটিই বহাল রাখার দাবি নিয়ে আপত্তি তোলেন বেচারাম অনুগামীরা। এ নিয়ে বৈঠক কিছুটা গরম হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। বৈঠক অসম্পূর্ণই থাকে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘আলোচনা এ দিন অসম্পূর্ণ রয়েছে। বুধবার ফের আলোচনায় বসব। তবে, বরফ কিছুটা গলেছে।’’ বেচারাম এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। দুধকুমারবাবুর দাবি, ‘‘সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বৈঠকে ৯০ শতাংশই মিটে গিয়েছে। বুধবার আমরা ফের আলোচনায় বসব। ঐক্যবদ্ধ ভাবেই ভোটে লড়ব।’’

দু’পক্ষ বরফ গলার ইঙ্গিত দিলেও সিঙ্গুরের সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই মনে করছেন, এ বরফ সহজে সমস্যা মেটার নয়। এক তৃণমূল নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘এ তো উত্তরের সাবিত্রী মিত্র-কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর বিবাদের মতোই। মেটার নয়।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন তো বলেই দিলেন, সিঙ্গুরে দুই নেতার বিবাদের জন্যই তো এখনও প্রচারে গতি আসেনি। সেই জায়গায় সিপিএম প্রার্থী রবীন দেব ন্যানোতে চড়ে সিঙ্গুরে শিল্পের স্বপ্ন ফেরি করা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন।

বস্তুত, সেই ২০১২ সালের পর দু’পক্ষকে এই প্রথম একসঙ্গে দেখা গেল। চার বছর ধরে নিজেকে কার্যত গুটিয়ে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন বেচারাম এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। রবীন্দ্রনাথবাবুর কিছু মন্তব্যও দল ভাল ভাবে নেয়নি। দলের পক্ষ থেকে বেচারামকে সিঙ্গুরের উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘মাস্টারমশাই’কে যাতে এ বারে প্রার্থী করা না হয়, তার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি বেচারামরা। ওই দাবিতে সিঙ্গুর থেকে অন্তত কয়েকশো তৃণমূল নেতার স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিও দেওয়া হয়েছিল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সেই চিঠিকে মমতা আমল দেননি। প্রার্থী করা হয় ‘মাস্টারমশাই’কেই। তার পরেও দলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থামেনি।

গত শুক্রবারই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব পক্ষকে মানিয়ে নিয়ে চলার নির্দেশ দেন বেচারামকে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তার পরেও বিবাদ মেটার লক্ষণ দেখা যায়নি। তাই হস্তক্ষেপ করতে হয় শীর্ষ নেতৃত্বকে।

এখন দেখার, ভোট-প্রচারে দু’পক্ষ কতটা কাছাকাছি আসে!

TMC election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy