Advertisement
E-Paper

কালীপুজো দেখতে বেরিয়ে পাড়ার যুবকদের হাতেই ধর্ষিত দুই কিশোরী, মৃত ১

এক জন কীটনাশক খেয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে। আর এক জন গলায় দড়ি দিয়েছে, সে আর বেঁচে নেই। পড়শি যুবকদের বিশ্বাস করে কালীপুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরনোর খেসারত এ ভাবেই দিল একই পরিবারের দুই কিশোরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫২

এক জন কীটনাশক খেয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে। আর এক জন গলায় দড়ি দিয়েছে, সে আর বেঁচে নেই।

পড়শি যুবকদের বিশ্বাস করে কালীপুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরনোর খেসারত এ ভাবেই দিল একই পরিবারের দুই কিশোরী। মাথাভাঙার হাজরাহাট পঞ্চায়েত এলাকায় বেলেরডাঙা গ্রামে শনিবার রাতে বেড়াতে বেরিয়ে দুই যুবক তাদের ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রী সম্পর্কে পিসি, ভাইঝি। বেলেরডাঙা গ্রামে তাদের বাড়িও পাশাপাশি। পরিবারের সকলেই চাষের কাজ করেন। অভিযুক্ত দুই যুবকের বয়সও বেশি নয়। তাদের সঙ্গে আগে থেকেই ওই দুই কিশোরীর আলাপ ছিল। যুবকেরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। এক জন ট্রাক্টর চালায়, আর এক জন খেতে কাজ করে।

ওই দুই কিশোরীর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, যুবকদের সঙ্গে মেয়ে দু’টি কালীপুজো দেখতে বেরিয়েছিল। রাতে বাড়ি ফিরে তারা দু’জনেই ভেঙে পড়ে। জানায়, ওই যুবকেরা তাদের ধর্ষণ করেছে। বাড়ির লোকেদের কাছে তাদের দাবি, বেরোনোর পরেই যুবকদের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে তারা ফিরে আসতে চেয়েছিল। তখন তাদের টেনে হিঁচড়ে কাছের একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই যুবকেরা ধর্ষণ করে।

বাড়ি ফিরে মেয়ে দু’টি প্রথমে সব কথা খুলে বলে। তার পরে কেউ কিছু বোঝার আগেই একজন কীটনাশক খেয়ে নেয়। তাকে কোচবিহার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মেয়েটির চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেনি পরিবার। রবিবার দুপুরে দুই কিশোরীর পরিবারই থানায় যায়। ঠিক সেই সময়েই ফাঁকা বাড়ি পেয়ে অন্য মেয়েটি গলায় দড়ি দেয় বলে জানা গিয়েছে।

যে কিশোরী কীটনাশক খেয়েছে, তার মামা বলেন, ‘‘ওদের দু’জনকে বাড়িতে কোনও বকাবকি করা হয়নি। আমরা বুঝতেই পারছিলাম, ওরা ঘটনার শিকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাই বলে এমন কাণ্ড করবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি।’’ তিনি জানান, পুলিশের কাছে সব কথাই খুলে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরীর ময়নাতদন্ত হচ্ছে। তা থেকেই জানা যাবে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না। অসুস্থ কিশোরী খানিকটা সুস্থ হলে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে। ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হবে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, ‘‘যেমন অভিযোগ হয়েছে, তেমনই মামলা দেওয়া হচ্ছে।’’ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

দীপাবলির রাতে এই ঘটনায় রাতারাতি বদলে গিয়েছে গোটা গ্রামই। রবিবার রাতে প্রদীপ জ্বলেনি তেমন ভাবে। তার উপর এলাকারই দুই যুবক অভিযুক্ত হওয়ায় গ্রামের মানুষের মন আরও ভেঙে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের কয়েক জন জানান, তাঁদের এলাকাটি এমনিতে শান্তিপ্রিয় বলেই পরিচিত। গ্রামের ছেলেরাই এমন গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত হবে, সে কথা তাঁরা ভাবতেই পারছেন না।

চিকিৎসাধীন কিশোরীর বাবা বলেন, “দীপাবলির দিন আনন্দ করবে ভেবেছিল মেয়েটা। আলোর উৎসবের সেই দিনটাই জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসবে দুঃস্বপ্নেও মনে হয়নি।” আত্মঘাতী কিশোরীও খুবই প্রাণবন্ত ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবার ও গ্রামের লোকেরা। নবম শ্রেণির পড়ুয়া ওই দুই কিশোরীই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। মাথাভাঙা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আবু তালেব আজাদ বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। পুলিশের তদন্তেই সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। দোষীরা পার পাবে না।”

হাজরাহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিমালা বর্মন বলেন, ‘‘এলাকার ছেলেরাই এমন করল, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সাঙ্ঘাতিক ঘটনা। দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইছি।’’ আর মাথাভাঙার ডিওয়াইএফআই নেতা কাজল রায় বলেন, ‘‘উদ্বেগজনক ঘটনা। এমন হলে তো মহিলারা বাড়ির বাইরে যেতেই ভয় পাবেন!’’

রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতনের অজস্র ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরেই বারবার সংবাদের শিরোনামে আসছে। তার মধ্যে অনেকগুলিতেই লালসার শিকার হতে দেখা যাচ্ছে নাবালিকাদের। কিশোর মনে এমন ঘটনার প্রভাব যে কত মারাত্মক হতে পারে, মাথাভাঙার দুই মেয়ে সেটাই আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।

2 young Girls rape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy