দুর্ঘটনাগ্রস্ত নৌকা। — ফাইল চিত্র
মায়াচরের কাছে রূপনারায়ণে নৌকাডুবির ঘটনায় নৌকার মাঝি তথা মালিক লক্ষ্মণ পাল এবং তাঁর সহকারী গোরাচাঁদ পালকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর দু’টো নাগাদ মায়াচর থেকে লক্ষ্মণকে গ্রেফতার করে মহিষাদল থানার পুলিশ। গোরাচাঁদকে সোমবার গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ দিকে, সোমবারের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ কার্তিক সামন্তের খোঁজ মেলেনি এ দিনও।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেলা পরিবহণ দফতরের আধিকারিকের অভিযোগের ভিত্তিতে লক্ষ্মণ এবং গোরাচাঁদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নৌকায় লাইফ জ্যাকেট, বয়া এবং রাতে দিক নির্দেশক আলোর না রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে। জেলা পরিবহণ আধিকারিক সজল অধিকারী বলেন, ‘‘মায়াচর-দনিপুর রুটে ডুবির ঘটনায় ইজারাদার, নৌকার মাঝির গাফিলতি রয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি অবহেলা করা হয়েছে। তাই পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘যাত্রীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।’’
নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কার্তিকের এ দিনও খোঁজ মেলেনি। বছর বাহান্নের কার্তিকের সন্ধানে সোমবার রাত পর্যন্ত রূপনারায়ণ নদে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ নৌকা নিয়ে এবং উপকূলরক্ষী হোভারক্র্যাফটে তল্লাশি চালায়। এ দিন সকাল থেকে ফের মহিষাদল থানার পুলিশ নৌকা নিয়ে তল্লাশি শুরু করে। যদিও বিকেল পর্যন্ত কার্তিকের সন্ধান মেলেনি। নৌকাডুবির ঘটনায় এ দিন জেলাশাসকের দফতরের একটি পর্যালোচনা বৈঠকও হয়েছে।
এর মধ্যেই পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মায়াচর-দনিপুর ফেরি রুট প্রসঙ্গে সোমবার সাংবাদমাধ্যমে শুভেন্দু দাবি করেন, কারও অনুমতি ছাড়াই ঘাট চলছিল। তাঁরা অনেক আগেই ঘাট বন্ধ করতে বলেছিলেন। যদিও এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ওই পথে ফেরি চালাচল আদৌও বেআইনি নয়। প্রশাসনের তরফে লিজ দিয়েই ওই রুটে নৌকা চলাচল করছিল। ২০১৮ সালের ৩০মে অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ওই খেয়া পারাপারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বছরে দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই রুটে লিজ নিয়েছিলেন লক্ষ্মণ।
অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিমালা প্রামাণিক বলেন, ‘‘নিয়মমতো লিজ নিয়েছিলেন লক্ষ্মণ পাল। এই খাতে পাওয়া টাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল হিসাবে গণ্য হয় এবং তা উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়। নদীর এই অংশে নাব্যতা এত কম যে, ভুটভুটি ছাড়া গতিও নেই।’’ জেলা পরিবহণ আধিকারিক সজল অধিকারীও বলছেন, ‘‘এই ভুটভুটি চলাচল বেআইনি নয়। নিয়ম মেনে লিজ নিয়েই ভুটভুটি চলাচল করছিল।’’ ফলে প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনার পরে ফেরি ঘাটকে হঠাৎ বেআইনি বলা হল কেন?
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘ভুটভুটিগুলি আইনমাফিক চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সব কাগজপত্র ও প্রমাণ দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy