Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের জোড়া সাংসদ বহিষ্কৃত, একজন বিজেপিতে

দলের কোনও সাংগঠনিক কাজের সঙ্গেও দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ ছিল না তাঁদের। লোকসভা ভোটের আগে এই দুই সাংসদের ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্ব কড়া পদক্ষেপ করতে পারেন বলে অনেক দিন ধরেই দলের অন্দরে গুঞ্জন চলছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৫
সৌমিত্র খাঁ ও অনুপম হাজরা

সৌমিত্র খাঁ ও অনুপম হাজরা

দলবিরোধী কাজের জন্য বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-কে বহিষ্কার করল তৃণমূল। বুধবার দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। একই কারণে একই দিনে বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরাকেও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল তৃণমূল।

এই দুই তরুণ সাংসদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই দলের দূরত্ব বাড়ছিল। দু’জনেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা মন্তব্য করে দলের ক্ষোভ বাড়িয়েছেন। দলের কোনও সাংগঠনিক কাজের সঙ্গেও দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ ছিল না তাঁদের। লোকসভা ভোটের আগে এই দুই সাংসদের ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্ব কড়া পদক্ষেপ করতে পারেন বলে অনেক দিন ধরেই দলের অন্দরে গুঞ্জন চলছিল। এ দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই দলবিরোধী বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র। দলের সংগঠনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। অনেক অপেক্ষা করেছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সৌমিত্রকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।’’ বোলপুরের সাংসদ সম্পর্কে পার্থবাবু বলেন, ‘‘অনুপম আরও ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে এমন এমন মন্তব্য করেছেন, যার দলের নীতির একেবারেই বিরোধী। তাঁকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ বহিষ্কৃত হওয়ার পরে অনুপম টুইটারে লেখেন, ‘অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়া পড়াশোনার কাজ নিয়ে আজ থেকে আরও বেশি করে ভাবার সময় পাব। শ্বাস নিতে পারব। স্বাধীন ভাবে নিজের মতামত জানাতে পারব’।

অনুপমের সঙ্গে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বরাবরই ‘শীতল’ সম্পর্ক। অনুপম বহিষ্কৃত হওয়ায় অনুব্রতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের জন্য, মানুষের জন্য কোনও কাজ করেননি উনি। দল যা ভাল বুঝেছে, তাই-ই করেছে।’’

রাজ্যে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ তুলে সৌমিত্র অবশ্য সরাসরি আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা এবং যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ওই দু’জনের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে এখন পুলিশতন্ত্র চলছে। জবাবে অভিষেকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সৌমিত্র তো ২০১১ সালে জোটের প্রার্থী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যেই জিতেছিলেন। ওঁর সাংসদ তহবিলের কত টাকা এখনও খরচ হয়নি, সেটা আগে জানান। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, উনি বিজেপির হয়ে একটা বুথে জিতে দেখান। তা হলে আমার নাম বদলে ফেলব।’’

বছর কয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে সৌমিত্র যে নেতার হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তিনিও এখন বিজেপিতে। এ দিন দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় সদর দফতরে সেই নেতার উপস্থিতিতেই পদ্মফুলের পতাকা হাতে নেন সৌমিত্র। তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যে সৌমিত্র যোগাযোগ রাখছিলেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘ওঁর গুরু তো এখন বিজেপিতে গিয়েছেন। শিষ্যর তো তৃণমূলে অসুবিধা হচ্ছিলই। আমি বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক হওয়ায় অসুবিধা আরও বেড়েছিল। উনি এতদিন দলবদল করেননি কেন?’’

বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুকোমলকান্তি দাস তাঁকে খুনের চক্রান্ত করছেন বলে মঙ্গলবারই সৌমিত্র ফেসবুকে অভিযোগ করেন। তাঁর অফিসের আপ্ত সহায়ক সুশান্ত দাঁ(গোপী)-কে গুম করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ জানান। পুলিশ প্রথমে তা অস্বীকার করলেও বুধবারই সুশান্তকে বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই গ্রেফতার প্রসঙ্গে সৌমিত্রর অভিযোগ, ‘‘আমার ঘনিষ্ঠ বলেই মিথ্যা মামলায় গোপীকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা সাজাতে গোপীকে ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।” সুকোমলকান্তিবাবুর বক্তব্য, “বিষ্ণুপুরের কাদের খানকে গ্রেফতার করে তাঁর কাছ থেকে গুলিভর্তি পাইপগান উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে জেরা করেই সুশান্তর নাম উঠে আসে। অস্ত্র আইনেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

বিজেপি সৌমিত্রকে লোকসভায় প্রার্থী করবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘এ তো সবে বউনি হল! আরও অনেকে আসবেন।’’ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলে ফিরহাদ হাকিমও জিরো। সৌমিত্র খানও জিরো।’’

MP TMC BJP Anupam Hazra Saumitra Khan Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy