Advertisement
E-Paper

র‌্যাঞ্চোর ঢঙেই প্রাণ বাঁচিয়ে সম্মানিত ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’

গামছা দিয়ে রোগীকে পিঠে বেঁধে জঙ্গলের মধ্যে মোটরবাইক চালাচ্ছেন করিমুল হক। হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু পড়লেন ছিনতাইবাজদের কবলে।

অনিতা দত্ত ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
মোটরবাইক অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন করিমুল। — ফাইল চিত্র

মোটরবাইক অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন করিমুল। — ফাইল চিত্র

গামছা দিয়ে রোগীকে পিঠে বেঁধে জঙ্গলের মধ্যে মোটরবাইক চালাচ্ছেন করিমুল হক। হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু পড়লেন ছিনতাইবাজদের কবলে। মুখে টর্চ ফেলে তাদের একজন জলপাইগুড়ির ধলাবাড়ির করিমুলকে চিনে ফেলল—‘‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা যে!’’

শুধু যে পথই ছেড়ে দেওয়া হল তা নয়, রাহা খরচ হিসেবে তিনশো টাকাও তারা গুঁজে দেয় করিমুলের হাতে।

রোগী নিয়ে করিমুলের এই যাত্রা শুরু তাঁর মায়ের মৃত্যুর দিন থেকে। সে দিন অসুস্থ মা’কে পাঁজাকোলা করে নিয়েই ছুটেছিলেন। রাস্তা ছিল না। যানবাহনেরও প্রশ্ন ওঠে না। পথেই তাঁর দু’হাতে নিথর হয়ে যান মা।

করিমুলের বয়স তখন আঠাশ। ঠিক করে নেন, রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াই হবে ব্রত। অসুস্থ পড়শি-পরিজনকে বাইকটিতে তুলে পিঠে বেঁধে খানাখন্দ পেরিয়ে চলে যান কখনও ৪৫ কিলোমিটার দূরের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে, কিংবা ৬০ কিলোমিটার উজিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ধীরে ধীরে তাঁর বাইক-অ্যাম্বুল্যান্সের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এখন ময়নাগুড়িতেও কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স না পেলে করিমুলকে ফোন করেন। ঝড়, জল, রাত-বিরেত যাই হোক, করিমুল খবর পেলেই বাইক নিয়ে ঠিক হাজির। কারও কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেন না। সবার কাছেই তাঁর পরিচিতি ওই ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’।

ভালবাসা পেয়েছেন প্রচুর। এ বার পেলেন পদ্মশ্রী। মালবাজারের সুবর্ণপুর চা বাগানে শ্রমিকদের কাজ তদারকি করেন। হাজার পাঁচেক টাকা বেতন। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে।

২০১৩ সালের এপ্রিলে করিমুলের কথা লেখা হয় আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাঁর স্ত্রী জানান, তার পর অনেকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন। পরিজনেরা কেউ কেউ জ্বালানির খরচ দেন। একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁকে একটি ট্রলি লাগানো বাইক দিয়েছে। তবে করিমুলের বক্তব্য, ট্রলিতে সাধারণত কাউকে তোলেন না, কারণ তাতে রাস্তায় যেতে সময় লাগে।

যে দৃশ্য দেখলে ঠিক ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর কথা মনে পড়ে যাবে। যেখানে রাজু রাস্তোগির অসুস্থ বাবাকে একই ভাবে বেঁধে স্কুটারে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাঞ্চো। তবে ফারাক হল, করিমুলের কথায়, ‘‘আমাকে তাঁরাই ডাকেন, যাঁরা খুব দুঃস্থ। রোগীর অবস্থাও বেশির ভাগ সময় খুব সঙ্কটজনক থাকে। তাই দেরি করা যায় না।’’ তবে তিনি প্রসূতিদের মোটরবাইকে তোলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ও সব ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি হয়ে যায়।’’ ট্রলিতে করে তিনি একবার দু’টি দেহও নিয়ে এসেছিলেন। দু’টি ক্ষেত্রেই অতি দুঃস্থ পরিবারের পক্ষে প্রিয়জনের দেহ গ্রামে নিয়ে আসার সামর্থ্য ছিল না।

পদ্মশ্রী পেয়েছেন কলকাতার বিপিন গনত্রও। আগুনের গ্রাসে ভাইকে হারিয়েছিলেন। সেই থেকে দমকলের স্বেচ্ছাসেবক। বিপিনবাবু কখনও চটশ্রমিক, কখনও বিদ্যুৎকর্মী হিসেবে জীবন চালিয়েছেন। কিন্তু কলকাতা ও শহরতলিতে যেখানে আগুন লাগার খবর পান, সেখানেই ছুটে যান। গত চল্লিশ বছর ধরে ‘অগ্নিরক্ষক’-এর’এই স্বেচ্ছাশ্রমকে আজ স্বীকৃতি দিল কেন্দ্র।

চিকিৎসক সুব্রত দাস আবার জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের দ্রুত চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর গড়া গুজরাতের লাইফ লাইন ফাউন্ডেশন কাজ করছে মহারাষ্ট্র, কেরল, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গে। প্রায় ১২০০ জীবন বাঁচিয়েছেন তাঁরা। ‘হাইওয়ে মসিহা’-কেও তাই পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মান জানিয়েছে কেন্দ্র।

Padma Shri Unsung Heroes Social Work
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy