Advertisement
E-Paper

খুনের অন্য কারণও সামনে আনল উদয়ন

নিজেকে বিত্তশালী দেখানোর জন্য নানা রকম ফিকির করত তিন খুনে গ্রেফতার হওয়া উদয়ন দাস। পুলিশের দাবি, প্রেমিকা আকাঙ্ক্ষা শর্মাকেও আমেরিকায় বড় চাকরি করে বলে ভাঁওতা দিয়েছিল উদয়ন। বাঁকুড়ার ওই তরুণী উদয়নের পাতা জালে পা-ও দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৭

নিজেকে বিত্তশালী দেখানোর জন্য নানা রকম ফিকির করত তিন খুনে গ্রেফতার হওয়া উদয়ন দাস। পুলিশের দাবি, প্রেমিকা আকাঙ্ক্ষা শর্মাকেও আমেরিকায় বড় চাকরি করে বলে ভাঁওতা দিয়েছিল উদয়ন। বাঁকুড়ার ওই তরুণী উদয়নের পাতা জালে পা-ও দেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উদয়ন তাঁদের কাছে দাবি করেছে, ২০০৭ সালে ‘অর্কুট’-এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন ওই তরুণী রাজস্থানে পড়াশোনা করছেন। ওই বছরেই জয়পুর বিমানবন্দরে উদয়ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে দেখা করে প্রেম নিবেদন করেছিল। তখনই আকাঙ্ক্ষা তাকে জানিয়ে ছিলেন, অন্য এক জনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। তা জানার পরেও উদয়ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অর্কুটের মাধ্যমে সম্পর্ক জারি রাখে। ফোনে কথাও হতো দু’জনের।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ২০১৪ সাল থেকে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ওই বছরেই দু’জনের দ্বিতীয়বার দেখা হয় কলকাতায়। এর পরে ওই বছরেই আকাঙ্ক্ষা দিল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। সেখানে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। উদয়ন তখন আকাঙ্ক্ষার জন্য প্রায়ই দিল্লিতে গিয়ে হোটেলে উঠত। শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই দিল্লি থেকে আকাঙ্ক্ষাকে পাঁচ বার ভোপালের সাকেতনগরে নিজের বাড়িতে সে নিয়ে গিয়েছে বলেও জেরায় জানিয়েছে উদয়ন। প্রতিবারই প্লেনে নিয়ে যেত। আকাঙ্ক্ষা জানতেন, উদয়ন আমেরিকায় থাকে। উদয়নের কাছে দু’টি মোবাইল ছিল। যার মধ্যে একটির ওয়ালপেপারে নিউইর্য়কের সময় সেট করা ছিল। আমেরিকা-দিল্লির মধ্যে উড়ানের সময়সূচি জানতে উদয়ন নিয়মিত একটি ওয়েবসাইটে চোখ রাখত। দেখা করতে আসার আগে আকাঙ্ক্ষাকে সে ফোন করে জানাত, নিউইর্য়ক থেকে সে প্লেনে উঠছে। আদপে সে তখন ভোপাল থেকে দিল্লির ট্রেনে চড়ত। যাত্রার সময়টুকু সে নিজের মোবাইল ‘ফ্লাইট মোডে’ রাখত, যাতে আকাঙ্ক্ষা চেষ্টা করলে ফোনে ধরতে পারতেন না।

পুলিশের দাবি, আমেরিকার প্লেন যে সময়ে দিল্লির বিমানবন্দরে নামত, সেই সময়টা আগে থেকে জেনে, তার পরেই আকাঙ্ক্ষাকে সে ফোন করে জানাত, দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে। দিল্লির একটি দু’তারা হোটেলে উদয়ন উঠত। আকাঙ্ক্ষার সামনে সর্বক্ষণ স্যুটেড-বুটেড হয়ে থাকত। সেখান থেকেই আকাঙ্ক্ষাকে ভোপালের বাড়িতে নিয়ে যেত। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে দিল্লিতে আকাঙ্ক্ষাকে নামিয়ে আমেরিকায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানিয়ে আসলে ভোপালে ফিরে আসত। আকাঙ্ক্ষার মন পেতেই সে এসব করেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এতে তার সঞ্চয়ের টাকা ক্রমশ ফুরিয়েও আসছিল।

২০১৬ সালের জুন মাসে অবশ্য আকাঙ্ক্ষা পাকাপাকি ভাবে সাকেতনগরে চলে যান উদয়নের সঙ্গে। তারিখটা ছিল ২৫ জুন। দু’জনে বিমানেই দিল্লি থেকে ভোপালে আসেন বলে পুলিশকে উদয়ন জানিয়েছে। ২৭ জুন তারা ভোপালের একটি কালীমন্দিরে বিয়ে করে। এই অবধি মোটামুটি ঠিক চলছিল। সমস্যা বাড়ে ওই তরুণী বারবার উদয়নকে আমেরিকা পাঠানোর বন্দোবস্ত করার তাগাদা দিতে থাকায়। আকাঙ্ক্ষাকে দেওয়া আশ্বাস মতো, আমেরিকায় নিয়ে যেতে পারছিল না উদয়ন। ক্রমশ মোহভঙ্গ হচ্ছিল আকাঙ্ক্ষার। পুলিশের কাছে উদয়নের আরও দাবি, এরই মাঝে আকাঙ্ক্ষার জীবনে প্রবেশ তাঁর প্রাক্তন ‘বয়ফ্রেন্ড’-এর। এই যুবকের কথাই আকাঙ্ক্ষা উদয়নকে প্রথমে জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়া সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে সে পুলিশের কাছে দাবি করে, ঘটনার দিন (১৫ জুলাই) সকালে আকাঙ্ক্ষার মোবাইলে এক জনের ফোন আসে। উদয়ন মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে দেখে, ওই যুবক ‘হোয়্যাটস অ্যাপ’-এ প্রেমের কথাবার্তা চালাচালি করেছে। এই নিয়ে দু’জনের তীব্র ঝগড়ার মধ্যেই বিছানায় বসে থাকা আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে খুন করে উদয়ন। গোটা ঘটনাটি আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতেও সে রাজি বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

পুলিশ অবশ্য উদয়নের কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এই ছেলে যে ভাবে দিনকে রাত করে দিতে পারে, তাতে কোনটা যে ওর সত্যি, বোঝা দায়! আমরাও বুঝে উঠতে পারছি না, ঠিক কী কারণে ও আকাঙ্ক্ষাকে খুন করেছে।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরাও বলেন, ‘‘খুনের প্রকৃত কারণ এখনও সামনে আসেনি। খুনের মোটিভ নিয়ে উদয়ন নানা রকম কথা বলছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অন্য দিকে, রায়পুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় অগ্রবাল এ দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোপালের সাকেতনগরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে রায়পুর পুলিশের একটি দল। তবে সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু মেলেনি। এ দিকে, উদয়নের বাবা-মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

Akansha Akansha Murder Case Udayan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy