Advertisement
E-Paper

জেলায় পৌঁছে রবীন্দ্রনাথকে ফোন উদয়নের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে টানলেও কোচবিহার তাঁকে কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন উদয়ন গুহ। রবিবার সকালে যখন ট্রেন থেকে নিউ কোচবিহার স্টেশনে কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাল হাজার জনতার ভিড়ে। কেউ জড়িয়ে ধরেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০৪
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে রবিবার কোচবিহারে এসে অনুগামীদের ভিড়ে উদয়ন গুহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে রবিবার কোচবিহারে এসে অনুগামীদের ভিড়ে উদয়ন গুহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে টানলেও কোচবিহার তাঁকে কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন উদয়ন গুহ। রবিবার সকালে যখন ট্রেন থেকে নিউ কোচবিহার স্টেশনে কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাল হাজার জনতার ভিড়ে। কেউ জড়িয়ে ধরেন। কেউ ফুলের তোড়া এগিয়ে দেন। মিছিল উদয়নবাবুকে এগিয়ে নিয়ে যায় দিনহাটার দিকে। সেখানে ব্যান্ড পার্টির তালে নেচে নেচে উদয়নবাবুকে অভিবাদন জানানো হয়। বিলি করা হয় লাড্ডু। তাঁর দলবদলে জনতার এত উল্লাসে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন উদয়নবাবু। চোখ ছলছল করে ওঠে তাঁর।

উদয়নবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার উপর আস্থা রেখেছেন। সাধারণ মানুষ আমার উপর ভরসা রেখেছেন। আমি সে আস্থা, ভরসা রেখেই কাজ করব।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মাথায় রেখে তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করব।’’ বিকালে তিনি ফোন করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। তাঁর সঙ্গে তিনি দেখাও করবেন বলে জানিয়েছেন। উদয়নবাবুর সঙ্গে জেলার রাজনীতিতে তীব্র বিরোধ রয়েছে রবীন্দ্রনাথবাবুর। বাম তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে দিনহাটায় লড়াই করতে গিয়ে উদয়নবাবু এবং তাঁর বাবা কমল গুহকেও আক্রমণ করেই বহু বার বক্তব্য রাখতে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথবাবুকে।

উদয়নবাবু তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা শুরু হলে নাম না করে তাঁকে একাধিকবার কটাক্ষ করেছেনে জেলা তৃণমূল সভাপতি। এদিন উদয়ন কোচবিহারে ফিরলেও দুই জনের মধ্যে দেখা হয়নি। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব ওই বিষয়ে যা বলার বলেছে। উদয়নবাবু আমাকে ফোন করেছিলেন। তাঁর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।”

শুধু রবীন্দ্রনাথবাবু নয়, সিপিএম তো বটেই ফরওয়ার্ড ব্লকের একটি অংশ উদয়নবাবুর ওই দল পরিবর্তন মেনে নেয়নি। তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এখানেই বসে না থেকে ফরওয়ার্ড ব্লক তাঁদের সংগঠন ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দিনহাটার বিভিন্ন এলাকায় যুবলিগের রাজ্য সভাপতি তথা দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রউফের নেতৃত্বে মিটিং, মিছিলও শুরু করা হয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর দাবি করেন, কয়েকজন নেতা ছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লকের কোনও কর্মী উদয়নবাবুর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেননি। তিনি বলেন, “সময় সব কথা বলবে।” আর এত উৎসাহ ‘নীতি পরিবর্তনের কৃতিত্ব’ বলে তিনি কটাক্ষ করেন। আব্দুর রউফ বলেন, “যেখানে যাচ্ছি সাড়া পাচ্ছি। আমাদের কর্মীরা আমাদের সঙ্গেই আছেন।” এই পরিস্থিতে উদয়ন ফিরলে মানুষ কতটা তাঁকে গ্রহণ করবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

এদিন উদয়নবাবু সকাল ১০ টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চেপে নিউ কোচবিহার পৌঁছন। সেখানে আগে থেকেই কয়েক হাজার মানুষ হাজির ছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে থাকা উদয়ন অনুগামীরা ছাড়াও তৃণমূলে রবীন্দ্রনাথ বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত দিনহাটার একাধিক নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা সেখানে যান। তৃণমূল নেতা দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক অশোক মণ্ডল স্টেশনেই উদয়নবাবুকে ফুল দিয়ে অভিন্দন জানান। বাইক ও গাড়ির মিছিল শুরু হয়। অশোকবাবু ও উদয়নবাবু একই গাড়িতে চাপেন। কোচবিহার শহর ঘুরে ওই মিছিল দিনহাটা যায়। সেখানে তৃণমূল নেতা অসীম নন্দী, পার্থনাথ সরকার, সুবল রায় সহ বহু তৃণমূল সমর্থক উদয়নবাবুকে স্বাগত জানান। ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে আনন্দেও সামিল হন তাঁরা। গাড়িতে বসেই মিছিল নিয়ে দিনহাটা শহরে ঘোরেন উদয়নবাবু। পরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উদয়নবাবু বলেন, “মানুষের পাশে থেকেছি। মানুষকে নিয়েই চলেছি। সবাইকে বলেছিলাম যদি বিশ্বাস করেন আস্থা রাখুন আমার উপর। মানুষ এভাবে আমাকে স্বাগত জানানোয় আজ সত্যি আমি অভিভূত।” উদয়নবাবু জানান, এদিন দিনহাটা পুরসভার ৯ কাউন্সিলর বাদেও দলের দুই জোনাল কমিটির সম্পাদক বিশু ধর, বিশ্বনাথ দে আমিন সহ শাখা কমিটির বহু নেতা ও কর্মী এদিন তৃণমূলে যোগ দেন। উদয়নবাবুর বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, “আজকের চিত্রই সব নয়, সময়েই তা প্রমাণ হবে।”

gautah Deb Udayan Guha dinhata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy