Advertisement
E-Paper

৫টি দেহ ফিরতেই ডুকরে উঠল গ্রাম

হাসপাতাল থেকে ফিরেও আহতেরা আর ঘরে বিশ্রাম নেননি। চলে গিয়েছেন শ্মশানে। মন মানেনি। পর পর সাজানো হয়েছিল কাঠের চিতা।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২২ ০৭:৩৯
শোকের ছায়া গ্রামে।

শোকের ছায়া গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

আগে থেকেই গ্রামে পর পর সাজানো ছিল পাঁচটি খাটিয়া।

কে জানত, হাসিমুখে গত সোমবার বেড়াতে যাওয়ার জন্য যাঁদের বাসে তুলে দিয়েছিলেন পরিজনরা, চোখের জলে তাঁদের চিরবিদায় জানাতে হবে বৃহস্পতিবার!

তখন ভোর ৪টে ১০। উদয়নারায়ণপুর বাস স্ট্যান্ডে থিকথিকে ভিড়। দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সে ফিরল ওড়িশায় বাস দুর্ঘটনায় মৃত ছ’জনের দেহ। একটি দেহ চলে গেল হুগলির জাঙ্গিপাড়ায়। বাকিগুলি ঢুকল উদয়নারায়ণপুরের সুলতানপুরে। মৌসুমি দেঁড়ে, তাঁর মেয়ে রিমা, সুপ্রিয়া দেঁড়ে, সঞ্জিৎ পাত্র এবং বর্ণালি মান্নার সাদা চাদরে ঢাকা দেহ দেখে আর নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না গ্রামবাসী। দেহগুলি পরপর শুইয়ে দেওয়া হল খাটিয়ায়। তখন কে-ই বা কাকে সান্ত্বনা দেয়!

মর্মান্তিক: দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ সুলতানপুরে পৌঁঁছনোর পর গ্রামবাসীদের ভিড়।

মর্মান্তিক: দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ সুলতানপুরে পৌঁঁছনোর পর গ্রামবাসীদের ভিড়। ছবি: সুব্রত জানা।

দুর্ঘটনার খবর পাওয়া ইস্তক আর চোখের পাতা এক করতে পারেননি গ্রামবাসী। জনে জনে জিজ্ঞাসা করেছেন, কখন ফিরবে দেহ। গ্রামে বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সকলে যখন শুনলেন, ভোরে ঢুকবে অ্যাম্বুল্যান্স, আর তর সয়নি। হাজির হয়েছেন বাস স্ট্যান্ডে।

সকাল ৭টা। একটি বাসে করে এসে পৌঁছলেন ৪১ জন আহত। কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, কারও হাতে, কারও পায়ে। আরও একবার ডুকরে উঠল গ্রাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকেই উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়।

হাসপাতাল থেকে ফিরেও আহতেরা আর ঘরে বিশ্রাম নেননি। চলে গিয়েছেন শ্মশানে। মন মানেনি। পর পর সাজানো হয়েছিল কাঠের চিতা। পাশাপাশি দুই চিতায় শোয়ানো ছিল মৌসুমি দেঁড়ে এবং তাঁর মেজো মেয়ে রিমার দেহ। দেখে আর স্থির থাকতে পারছিলেন না হারাধন দেঁড়ে। তিনি মৌসুমির স্বামী। দুর্ঘটনায় তিনি এবং তাঁদের এক মেয়েকেও জখম হয়েছেন।

হারাধনের কথায়, ‘‘সারা বছর চাষাবাদ করে মাঠেই দিন কেটে যায়। সোসাইটিতে পয়সা জমিয়ে সকলকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আগামী নভেম্বরে রিমার বিয়ে ছিল। ভেবেছিলাম, শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর আগে মেয়েকে একটু ঘুরিয়ে আনি। সেটাই কাল হল!’’

সব মিলিয়ে ওই গ্রামের ৭২ জন গত সোমবার বাসে বিশাখাপত্তনম-সহ কিছু জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। দারিংবাড়ি ঘুরে বিশাখাপত্তনম যাওয়ার পথে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার কলিঙ্গঘাটিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে গ্রামেই ছিলেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা। খ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধান করেন। বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে উদয়নারায়ণপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে সুস্থ হলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান জেলাশাসক মুক্তা আর্য, উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজদা আহমেদ, গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায়, মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) শমীককুমার ঘোষ-সহ প্রশাসনের কর্তারা।

বিপর্যয়ে কথা হারিয়ে ফেলেছে সুলতানপুর।

udaynarayanpur Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy