স্বাধীন ভারতে এই প্রথম বার কোনও কর সংস্কার স্পর্শ করবে ১৪০ কোটি দেশবাসীকে। জিএসটি সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সাফল্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার এ কথা জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সেই সঙ্গে শারদোৎসবের আগে কলকাতায় এসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বলা হচ্ছে এটি (জিএসটি সংস্কার) দীপাবলির উপহার। কিন্তু এটি পুজোর কথা মাথায় রেখেও করা হয়েছে।’’
জাতীয় গ্রন্থাগারের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভাষা ভবনে বৃহস্পতিবার শিল্প ও বণিক মহলের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেখানে তাঁর দাবি, এর আগের সব সংস্কার শুধু সমাজের একটা অংশকে স্পর্শ করত। আয়কর ছাড় একটা নির্দিষ্ট অংশকে সুবিধা দিত। কারণ আয়করযোগ্য আয় সমাজের একটি অংশই করে। তা ছাড়া, আগেকার কর্পোরেট কর, এসটিজি, মূলধনী লাভের উপরে করছাড় ইত্যাদি শুধু একটি শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জিএসটি ধনী, গরিব, শহরবাসী, গ্রামবাসী সকলেই দেন। তাই জিএসটি ছাড়ের সুবিধা সমাজের সব অংশের মানুষই পাবেন।’’
এর পরেই নির্মলার বক্তব্যে এসেছে ‘পুজো’-প্রসঙ্গ। ঘটনাচক্রে মহালয়ার ঠিক পরের দিন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে জিএসটির নতুন স্তর এবং হার কার্যকর হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে শ্রোতাদের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাদের উৎসব শুরুর সময়ই চালু হচ্ছে জিএসটি ছাড়।’’ জিএসটির নতুন হার ও স্তর চালু করার তারিখ হিসেবে, কেন ২২ সেপ্টেম্বর তারিখকে বেছে নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় এসে এটা জানাতে আমার ভাল লাগছে যে, ২২ সেপ্টেম্বর তারিখকে স্থির করার উপরে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে বাংলার পুজো।’’ নির্মলা জানান যে, শিল্প মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল, খুব দ্রুত নতুন কর হার চালু করা হোক। ১০ সেপ্টেম্বর, ১৫ সেপ্টেম্বর, এমন নানা তারিখের প্রস্তাব আসছিল। নির্মলার কথায়, ‘‘আমরা বললাম, দাঁড়ান। বাংলায় পুজো কবে থেকে শুরু হচ্ছে? পিতৃপক্ষের পরের দিন থেকে। সুতরাং নতুন জিএসটির প্রথম শুভমঙ্গল দিন হবে নবরাত্রির প্রথম দিন। মহালয়ার পরের দিন।’’ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বাংলার খুব জোরদার প্রভাব রয়েছে?’’
জিএসটি কাঠামোর সংস্কারের ফলে বাংলা বিভিন্ন হস্তশিল্প এবং কৃষিজ পণ্যের ক্ষেত্রে লাভবান হবে বলেও জানিয়েছেন নির্মলা। সেই তালিকায় রয়েছে, শান্তিনিকেতন লেবেল্ড হস্তশিল্প, বাঁকুড়া পাঁচমুড়া টেরাকোটা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মাদুর, বীরভূম-মুর্শিদাবাদের নকশি কাঁথা, পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ, দক্ষিণ দিনাজপুরের কাঠের মুখোশ, শোলার হস্তশিল্প, মালদা-মুর্শিদাবাদের আম এবং দার্জিলিঙের চা। এ ছাড়া, হাওড়া-হুগলি-উত্তর ২৪ পরগনার পাটশিল্পও জিএসটি ছাড়ের সুবিধা পাবে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গোড়ায় জিএসটি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জিএসটি ২.০-তে থেকে মূলত দু’টি করের হার চালু হবে। ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। ১২ শতাংশ ও ২৮ শতাংশের জিএসটি হার তুলে দেওয়া হবে। তার ফলে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে জিএসটি-র হার ১২ বা ১৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ বা শূন্যে নেমে আসবে। তবে ‘পাপের পণ্য’ (যেমন সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য) এবং বিলাসবহুল পণ্যের উপর জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) এখন একটি বিশেষ ৪০ শতাংশ স্ল্যাবের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ফলে পুরো কর-প্রক্রিয়া অনেক সরল হয়েছে বলে জানান নির্মলা। পাশাপাশি, জাতীয় গ্রন্থাগারের সভায় পূর্বতন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনে বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, মোদীর জমানায় কর হস্তান্তর এবং অনুদান বাবদ বহুগুণ বেশি অর্থ পাচ্ছে বাংলা।