Advertisement
E-Paper

ভালবাসার পাসপোর্ট মঞ্জুর, নিশ্চিন্ত এ পারের বীর-জারা

ভালোবাসার মাঝে নির্দয় ভাবে এসে দাঁড়াতে পারে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

ভালবাসার দিনেই উড়ে এল খবরটা — জয় হয়েছে ভালবাসার।

যে অনিশ্চয়তা নিয়ে গত দেড় বছর কেটেছে, মনে হয়েছে যে কোনও দিন মুহূর্তে আলাদা হয়ে যেতে পারে জাপটে ধরা দু’টো হাত। ভালোবাসার মাঝে নির্দয় ভাবে এসে দাঁড়াতে পারে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া।

বৃহস্পতিবার ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে কেঁদে ফেললেন মনোজ (নাম পরিবর্তিত), ‘‘দাদা! সুলতা (নাম পরিবর্তিত) ভারতের পাসপোর্ট পেয়ে গিয়েছে। আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না।’’ যার অর্থ, সুলতাকে আর ফিরতে হবে না ও-পার বাংলায়। মনোজের স্ত্রী হিসেবে তিনি থেকে যেতে পারবেন ভারতে।

২০১৭ সালের মে মাসের শেষ দিনে ঢাকা যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে ধরা পড়েছিলেন সুলতা। আদতে বাংলাদেশি, অথচ সঙ্গে ভারতীয় পাসপোর্ট। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমান মনোজকেও গ্রেফতার করা হয়। তত দিনে বিয়ে হয়ে গিয়েছে দু’জনের। দু’মাস জেল খাটার পরে ১ অগস্ট জামিন পান সুলতা। ফিরে যান ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায়, মনোজের বাড়ি। তার পর থেকে বহুবার হাত ধরাধরি করে ওই দম্পতি কলকাতায় এসে উঠেছেন সদর স্ট্রিটের হোটেলে, একচিলতে ঘরে। ছুটেছেন আদালতে। বুকের ভিতরটা দুরমুশ করেছে হাতুড়ির ঘা — বিচারের শেষে যদি সুলতাকে ফিরে যেতে হয়? তখন আর কি কোনও দিন এ দেশে আসতে পারবেন? ‘অনুপ্রবেশকারী’কে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত মনোজও কি কোনও দিন বাংলাদেশে যেতে পারবেন? দেড় বছর ধরে এই অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন তাঁরা। বারাসত আদালত অবশেষে সুলতাকে ভারতীয় পাসপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দু’দিন আগে। ভালবাসার দিনটিতে সেই সুখবর মনোজ পৌঁছে দিলেন সংবাদমাধ্যমে।

আরও পড়ুন: শেষবেলায় ফেসবুকে ‘পথের পাঁচালী’ সন্ধ্যার

কে এই মনোজ ও সুলতা?

সুলতা নিজেই জানাচ্ছেন, তিনি বাংলাদেশের মেয়ে। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৪ সালে এক বান্ধবীর সঙ্গে বেআইনি ভাবে সীমান্ত টপকে চলে এসেছিলেন এ পারে। ও পারে রয়ে যান তাঁর মা ও ছ’বছরের মেয়ে। সুলতা আর তাঁর বান্ধবীকে তাঁদেরই অন্য এক সঙ্গিনী আশ্বাস দিয়েছিল, কলকাতায় ২০ হাজার টাকার চাকরি হবে। বাস্তবে এ পারে আসার পরে দুই যুবতীকে সোনাগাছিতে বিক্রি করে পালিয়ে যায় সে।

ও দিকে জামতাড়ার বাসিন্দা মনোজ সিংহের স্ত্রী ছ’মাসের ছেলেকে রেখে মারা যান ২০১৩ সালে। ব্যবসার কাজে মনোজকে প্রায়ই আসতে হত কলকাতায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সোনাগাছিতে তাঁর আলাপ হয় সুলতার সঙ্গে। দু’জনেরই দু’জনকে ভাল লেগে যায়। সুলতা মনোজকে জানান, বাংলাদেশে ফিরতে চান। লুকিয়ে সুলতাকে সেখান থেকে বার করে গাড়ি ভাড়া করে বনগাঁ সীমান্তে পৌঁছে দেন মনোজই। আর কোনও দিন দেখা হবে কি না, সেই সংশয় নিয়েই যে যার বাড়ি ফিরে যান।

ঢাকায় ফিরে জীবন কিন্তু পাল্টাল না সুলতার। আবার শুরু হল স্বামীর অত্যাচার। তালাক নিয়ে সুলতা ২০১৬ সালের মার্চে আবার ফোন করলেন মনোজকে। বললেন, ‘‘ফিরতে চাই তোমার কাছেই।’’ ১০ মার্চ আবার দালাল ধরে সীমান্ত টপকে ভারতে এলেন সুলতা। ৩০ মার্চ জামতাড়ায় বিয়ে হল দু’জনের। মনোজের শিশুপুত্রের সঙ্গে ভাব জমতেও সময় লাগল না। আত্মীয়দের শত আপত্তি সত্ত্বেও হাসিমুখে বৌমাকে মেনে নিলেন মনোজের বাবা-মাও। কিন্তু বছরখানেকের মধ্যে সুলতার প্রাণ কেঁদে উঠল বাংলাদেশে ফেলে আসা মেয়ের জন্য।

পাসপোর্ট তৈরি করালেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন বিমানবন্দরে। শুরু হল আর এক লড়াই।

সেই লড়াইয়েরই মধুরেণ সমাপয়েৎ এ বার। আদালত সুলতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে মনোজের স্ত্রী হিসেবে। ভারতীয় নাগরিকের বৈধ পাসপোর্টও তিনি পাচ্ছেন। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়েই সুলতা এ বার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বাংলাদেশে।

Valentines Day Love Story
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy