Advertisement
E-Paper

থ্যালাসেমিয়া বাধা কেন, সম্পর্ক বাঁচুক নিজের ছন্দে 

চোদ্দো বছরের বন্ধুত্ব। প্রেমিকা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে সে সম্পর্ক ভাঙতে দ্বিধা করেননি প্রেমিক।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৫
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

চোদ্দো বছরের বন্ধুত্ব। প্রেমিকা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে সে সম্পর্ক ভাঙতে দ্বিধা করেননি প্রেমিক।

ছোটবেলা থেকে যে বাড়িতে অনায়াসে যাতায়াত ছিল মেয়েটির, তার সঙ্গে বাড়ির একমাত্র ছেলে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানার পরে বেঁকে বসেন বাবা-মা। শহরের দুই প্রান্তের দু’টি ঘটনা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার প্রমাণ বলে ধারনা চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের। ভালবাসার দিনে তা বদলের পক্ষে সওয়াল করলেন তাঁরা।

হাওড়ার বাসিন্দা ঝিন্নি গুপ্ত (নাম পরিবর্তিত) বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত। ঝিন্নি যখন নবম শ্রেণি, তখন থেকে অনুজের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে বন্ধুত্ব। মাস পাঁচেক আগে বন্ধু জানিয়ে দেন, ঝিন্নির রোগের কারণে তাঁর পরিবার পুত্রবধূ হিসেবে ঝিন্নিকে মানতে নারাজ। অনুজ নিজে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মচারী। বাবা-মা’কে বোঝানোর কথা বললে অনুজের জবাব ছিল, তাঁর কিছু করার নেই। আপাতত সব ভুলে একটি সরকারি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করছেন ঝিন্নি। নিউট্রিশনের ছাত্রীর কথায়, ‘‘থ্যালাসেমিয়া অনেক ধরনের হয়। যাঁরা অর্ধেক জানেন, তাঁদের নিয়ে সমস্যা সব চেয়ে বেশি। লোকের ধারণা, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তেরা স্বাভাবিক জীবন বাঁচতে পারে না। যেটা একেবারেই ঠিক নয়।’’

একই বক্তব্য বারাসতের বাসিন্দা ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর অদ্বিতীয়া সেনের (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধুত্ব। দু’বছর আগে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরেই সব কী রকম বদলে গেল! বান্ধবের (নাম পরিবর্তিত) মা আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসতেন। আমার সঙ্গে সব শেয়ার করতেন। সেই কাকু-কাকিমা সম্পর্কটা মেনে নেবেন না, ভাবতেই পারিনি। মাসে যে দু’টো দিন রক্ত নিই, তা ছাড়া বাকি দিন তো আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতোই!’’ অদ্বিতীয়ার ক্ষেত্রে তাঁর প্রেমিক পাশে আছেন। দু’চোখের পাতায় স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা তরুণী বলেন, ‘‘ও পাশে আছে বলে এখনও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার কথা ভাবতে পারি। আমরা ঠিক করেছি, এ বছর বিয়ে করবই।’’

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার প্রশ্নে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মহিলারা সব চেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হন। অদ্বিতীয়ার অভিজ্ঞতাও তাই। তিনি জানান, দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েও প্রশ্ন তোলেন, বান্ধব কেন এই সম্পর্কে রাজি হলেন? অদ্বিতীয়ার কথায়, ‘‘কোনও সহানুভূতি চাইছি না। আমরাও যে আর পাঁচ জনের মতো, সেটা নিয়ে একটু প্রচার হোক।’’

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছর থেকে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ হলেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পরিকাঠামোর অপ্রতুলতাও একটি বড় কারণ। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রচলিত ধারণা কতখানি ভ্রান্ত, তা বোঝাতে এক চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ জানান, বাবা ও মা দু’জনে বাহক না হলে সন্তানের কিছুতেই থ্যালাসেমিয়া হতে পারে না। অথচ মা’কে দায়ী করে বাবা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, এমন নজিরও রয়েছে। বাবা-মা দু’জনে বাহক হলে সব ক’টি সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। গর্ভস্থ অবস্থায় দশ থেকে বারো সপ্তাহের মাথায় ভ্রূণ পরীক্ষা করে বলা যায়, সেটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হতে যাচ্ছে কি না। এনআরএসের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া বাহক হয়েও অনেকেই সুস্থ মানুষের মতো বাঁচেন। এই রোগের ক্ষেত্রে স্পেশাল স্ক্রিনিংটা খুব জরুরি। প্রযুক্তি সঙ্গে আছে, বিজ্ঞান সঙ্গে আছে, মানুষের মনকে সঙ্গে আনতে হবে।’’

Valentines Day Thalassemia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy