E-Paper

সমীকরণ বুঝে বিএলএ নিয়োগ করছে নানা দল

ভোটার তালিকায় চলতি এসআইআর-এ (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী নিযুক্ত বিএলএ-রা বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)-দের সঙ্গে থাকবেন। নজর রাখবেন এসআইআর-এর গোটা কাজে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৩

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পরিস্থিতি বুঝে রাজনৈতিক দলগুলি ঘাঁটি গাড়তে চায়। যেখানে সাংগঠনিক জোর, ভোটার বা রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে তারা তুলনায় বেশি চিন্তিত, সেখানে বাড়ানো হচ্ছে লোকবল। বিশেষ নজর দেখা যাচ্ছে সীমান্তবর্তী, তথা রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বড় জেলাগুলিতে। ঘটনাচক্রে, চলতি অনুপ্রবেশ-বিতর্কের দিক থেকেও এই জেলাগুলি গুরুত্বপূর্ণ।

ভোটার তালিকায় চলতি এসআইআর-এ (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী নিযুক্ত বিএলএ-রা বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)-দের সঙ্গে থাকবেন। নজর রাখবেন এসআইআর-এর গোটা কাজে। আবার এসআইআর-এ বিভিন্ন পর্যায়ে যেখানে বিএলএ-দের সই করতে হবে, সেখানে তাঁরাই গ্রাহ্য হবেন, যাঁদের নাম কমিশনে নথিবদ্ধ। অথচ এখনও কোনও দল সব ভোটকেন্দ্রে বিএলএ নিয়োগই করেনি। বিএলএ সংখ্যার নিরিখে তৃণমূলের তুলনায় বিজেপি এগিয়ে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক ভাবে যে হেতু তৃণমূল এলাকায় এলাকায় হেল্প-ডেস্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই এখনও তাদের বিএলএ-সংখ্যা তুলনায় বেশ কম।

বুধবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৯৯ হাজার বিএলএ (কমিশনের পোশাকি নামে বিএলএ-২) নিয়োগ করেছে দলগুলি। তার মধ্যে তৃণমূল দিয়েছে প্রায় ২৮ হাজার এবং বিজেপি দিয়েছে প্রায় ৩৫,৬০০। সিপিএম প্রায় ২৭ হাজার, কংগ্রেস ৬৮০০। এ ছাড়াও ফরওয়ার্ড ব্লক ১০৯১ জন বিএলএ নিয়োগ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, কমিশনের দেওয়া সব এসআইআর-তথ্য বিএলএ-দের মাধ্যমে নিয়মিত জানতে পারবে দলগুলি। কোথাও কোনও আপত্তি বা দাবিদাওয়া থাকলে তা তুলে ধরার কথা বিএলএ-দেরই। সেখানে রাজ্যের প্রায় ৮১ হাজার বুথের সর্বত্র বিএলএ নিযুক্ত না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলেই।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এলাকা বিশেষে এক একটি দলের লক্ষ্য এক এক রকম। এখনও তৃণমূল যেমন সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সেখানে তারা ৭৯৫০ জন বিএলএ নিয়োগ করেছে। সেখানে নজর রয়েছে বিজেপিরও (৪৯১৬ জন)। উত্তর ২৪ পরগনাতেও তৃণমূল ৬২৬৮ জন বিএলও দিয়েছে। সেখানে বিজেপি ও সিপিএম যথাক্রমে ৫১৫২ এবং ৫৮৬১ জন। একই গুরুত্ব রয়েছে মুর্শিদাবাদেও। রাজনৈতিক, ভোটার-সমীকরণ এবং সীমান্তবর্তী অবস্থানগত কারণে জেলা দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ।

বিএলএ-সংখ্যা অনুযায়ী, কোচবিহার এবং পুরুলিয়ায় বিজেপির জোর তুলনায় বেশি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, সেখানকার রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সাংগঠনিক ক্ষমতার দিক থেকে তারা সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। এই দুই জেলায় তৃণমূলের বিএলএ সংখ্যা তুলনায় বেশ কম। আলিপুরদুয়ারে প্রায় সমসংখ্যক বিএলএ নিয়োগ করেছে এই দুই দল। ঝাড়গ্রামে বিশেষ জোর রয়েছে তৃণমূলের। নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, দুই দিনাজপুর, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমানে বিজেপি তুলনায় বেশি নজর রাখছে বিএলএ-দের মাধ্যমে।

বিহার এসআইআরের সময়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের বিস্তর অভিযোগ ছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রমাণিত হয়নি অধিকাংশ অভিযোগ। বিএলএ-দের ভূমিকাও সেখানে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, তাতে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে বেশিরভাগ দলের তরফে অভিযোগ জানানোই হয়নি। যে কাজ ছিল মূলত বিএলএ-দেরই। সেই দিক থেকে এসআইআর-এর এই পর্বে বিএলএ-দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কর্তার কথায়, “দাবিদাওয়া-অভিযোগ সব গ্রহণ করতে কমিশন খোলা মনে রয়েছে। কিন্তু পদ্ধতির দিক থেকে তা আইনসম্মত হতে হবে। ফলে বার বার রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, ক্রমশ বিএলএ-ঘাটতি পূরণ করে দেবে দলগুলি।”

তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “৮০ হাজার বুথের জন্য আমাদের বিএলএ ২ ও বিএলএ ১ তালিকা অনেক আগেই ১০০ শতাংশ তৈরি হয়েছে। জমাও পড়ছে। কমিশন বা বিএলও- রা কাজ শুরু করলেই তাঁরা যুক্ত হবেন।”

রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বিএলএ-২-দের জন্য বরাদ্দ নথি বিলির কাজ হয়নি। তাঁরা নির্দিষ্ট নথি ছাড়া উপস্থিত থাকতে পারছেন না। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটাই কার্যত নির্বাচন। তাই বিএলএ-দের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত এবং বিএলও-দের সহযোগিতা করা উচিত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision Booth Level Agent West Bengal government SIR West Bengal Politics

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy