Advertisement
০৩ মে ২০২৪

গবেষণাপত্রে টুকেছেন উপাচার্য, দাবি জুটার

উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে সুর চড়ালেন যাদবপুরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গত এক মাস ধরে তাঁদের দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়েছেন যে উপাচার্য, তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে উপাচার্য পদে অভিজিৎ চক্রবর্তীর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন তাঁরা। মঙ্গলবার গণ কনভেনশন করে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সংগঠন জুটা। তার ছত্রে ছত্রে তাদের বক্তব্য, অভিজিৎবাবু উপাচার্য পদের যোগ্যই নন।

জুটার গণ কনভেনশনে সুকান্ত চৌধুরী। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

জুটার গণ কনভেনশনে সুকান্ত চৌধুরী। মঙ্গলবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে সুর চড়ালেন যাদবপুরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

গত এক মাস ধরে তাঁদের দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়েছেন যে উপাচার্য, তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে উপাচার্য পদে অভিজিৎ চক্রবর্তীর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন তাঁরা।

মঙ্গলবার গণ কনভেনশন করে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সংগঠন জুটা। তার ছত্রে ছত্রে তাদের বক্তব্য, অভিজিৎবাবু উপাচার্য পদের যোগ্যই নন। ওই শ্বেতপত্রে জুটার অভিযোগ, অন্যের গবেষণাপত্র থেকে টুকেছেন উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা খরচের ব্যাপারে অনিয়ম করেছেন, নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন। ৬২ পাতার ওই শ্বেতপত্র আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন জুটার সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত। অভিজিৎবাবু অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থেই এই সব করা হচ্ছে।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধী ভবনে ওই কনভেনশনে যাদবপুরের ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক, প্রাক্তনী, অভিভাবক-সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান উপাচার্য। কনভেনশনে শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করে জুটার সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নতুন আইন অনুযায়ী যে সব যোগ্যতা থাকলে এক জন উপাচার্য হতে পারেন, তার কোনওটিই অভিজিৎবাবুর নেই। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১১ এবং ২০১২ সালে অভিজিৎবাবুর তিনটি গবেষণাপত্রে অন্য কয়েক জনের গবেষণাপত্র থেকে নকল করা হয়েছে। ২০১১-য় অন্য এক গবেষকের সঙ্গে প্রকাশিত অভিজিৎবাবুর একটি গবেষণাপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ২০০৮-এ চিনের তিন গবেষকের একটি পত্র থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। জুটার এক প্রবীণ সদস্যের মন্তব্য, “রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অন্যের গবেষণাপত্র থেকে নকলের অভিযোগ আগে কখনও ওঠেনি।”

এ দিনের কনভেনশনে যাদবপুরের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “নকলের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে আর কিছু বলার নেই! এর পরেও যদি আচার্য মনে করেন, উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎবাবুরই থাকা উচিত, তা হলে আমরা কী করব, জানি না। কারণ শিক্ষাজগতে এর থেকে বড় অভিযোগ হয় না।” জুটা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, অন্যের গবেষণাপত্র থেকে নকলের দায়ে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তরাখণ্ডের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদ ছাড়তে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিজিৎবাবুকে কেন সরানো হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা।

জুটার মতে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে যে ধরনের যোগসূত্র থাকলে বা যে ধরনের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকলে এক জন শিক্ষককে উপাচার্য পদের জন্য বাছাই করা যায়, অভিজিৎবাবুর ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই আগের সার্চ কমিটির পছন্দের তালিকায় ওঁর নাম ছিল না। শিক্ষক সংগঠনটির অভিযোগ, অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে তাঁর কার্যকালে অভিজিৎবাবু ৪৬ লক্ষ টাকার জিনিস কেনার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির ধার ধারেননি। অনুমোদিত পদ না থাকলেও এক আধিকারিককে নিয়োগ করেছেন। তা-ও বিজ্ঞাপন না দিয়ে। তা ছাড়া, শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া আইনেই বলা রয়েছে, রাজনৈতিক সংশ্রব থাকলে কোনও ব্যক্তিকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রদর্শনী। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎবাবুর দাবি, “আমাকে কালিমালিপ্ত করতে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমি এর নিন্দা করছি।” অন্যের গবেষণাপত্র থেকে নকলের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। আর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিয়েই কাজ করা হয়েছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, যদি কোনও অনিয়ম হত, তবে কমিটি তা অনুমোদন করত না এবং রাজ্য সরকারও ছাড়পত্র দিত না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বলছেন, জুটার অভিযোগ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট, অভিজিৎবাবু ইস্তফার কথা ভাবছেন না। ইতিপূর্বে একাধিক বার তিনি সে কথা বলেছেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ক্লাস নিতে যান। বেলা ১১টার কিছু পরে যাদবপুরে পৌঁছন, বেরিয়ে যান দুপুর দেড়টা নাগাদ। আজ, বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে বৈঠকে বসার কথা তাঁর। কিন্তু তাঁর ইস্তফার দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক, এমনকী শিক্ষাকর্মীদের একাংশ যে রকম একরোখা মনোভাব নিয়েছেন, তাতে সুষ্ঠু ভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

এ দিনের কনভেনশনে সুকান্তবাবুর মতো বেশ কয়েক জন এমেরিটাস অধ্যাপক যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমনই ছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সুজন চক্রবর্তী, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারেরাও। তাঁরা অবশ্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার, রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মালিনী ভট্টাচার্য। ছাত্র-শিক্ষকদের আস্থা হারিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে অভিজিৎবাবু কী করে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন, সেই প্রশ্ন তুলে বার্তা পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক নবনীতা দেবসেন। ক্যাম্পাসে যাতে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফেরে, তার জন্য শুভকামনা জানিয়ে ই-মেল পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ।

আজ, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যাদবপুরে জমায়েতের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি নিয়ে ৩০ ও ৩১ অক্টোবর গণভোট। এক ছাত্র বললেন, “উপাচার্যের পদত্যাগ চাইছে মাত্র কয়েক জন, এই বলে অনেকে প্রচার চালাচ্ছেন। সেটা যে ঠিক নয়, গণভোটেই তা প্রমাণিত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE