Advertisement
E-Paper

পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্ত পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে, সূর্যদের প্রশ্নের মুখে কারাটরা

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে চলতি বিতর্ক এ বার নাটকীয় মোড় নিল! আলিমুদ্দিনে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের উপস্থিতিতেই পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তকে পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাল বঙ্গ সিপিএম। নেতৃত্বে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৩৯
ত্রয়ী। সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শনিবার বৈঠকের শুরুতে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ছিলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।

ত্রয়ী। সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শনিবার বৈঠকের শুরুতে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ছিলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে চলতি বিতর্ক এ বার নাটকীয় মোড় নিল! আলিমুদ্দিনে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটদের উপস্থিতিতেই পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তকে পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাল বঙ্গ সিপিএম। নেতৃত্বে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে সিপিএমের পলিটব্যুরো বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। পলিটব্যুরোর ওই অবস্থানকে হাতিয়ার করেই জোটের সমালোচনায় নেমেছে বাম শিবিরের একাংশ। বামফ্রন্ট শরিকেরা শুক্রবারই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে পথ চলতে চাইলে ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। এমন আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে শনিবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শুরুতেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় গিয়েছেন সূর্যবাবু। রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই তাঁরা যে গণতান্ত্রিক জোটের পথে গিয়েছিলেন এবং জোট না থাকলে বামেদের ফল আরও শোচনীয় হতো— এই যুক্তি তিনি দিয়েছেন তো বটেই। সেই সঙ্গেই রাজ্য সম্পাদকের স্পষ্ট বার্তা, যা বিশ্বাস করেন না, সেই কাজ তাঁকে দিয়ে করানো যাবে না। যদি বলা হয় হাত ধরাধরি (কংগ্রেসের সঙ্গে) ভুল হয়েছিল, তা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক!

বাংলায় জোটের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ভোটের আগে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের রাজনৈতিক জীবন প্রায় বাজি রেখে লড়েছিলেন সূর্যবাবু। ভোটের পরে পলিটব্যুরোর ‘তিরস্কারে’র মুখে দাঁড়িয়েও তিনি যে ভাবে রাজ্য সিপিএমের সিদ্ধান্তকে আগলাতে চাইছেন এবং প্রয়োজনে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন, তা বাম রাজনীতিতে স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে বেনজির! রাজ্য সম্পাদক তাঁর অবস্থান থেকে এক চুলও না সরায় প্রথম দিনেই কারাট, ইয়েচুরি, এম এ বেবিদের সামনে রাজ্য কমিটির অন্তত ২৫ জন সদস্য জোটের পক্ষে ব্যাট ধরেছেন। একের পর এক জেলার প্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেছেন পলিটব্যুরোর বিবৃতির বাস্তবতা নিয়ে। জোটের বিপক্ষেও মুখ খুলেছেন কয়েক জন। এখনও পর্যন্ত ৭ নেতা। বর্ধমানের অচিন্ত্য মল্লিকের মতো নেতার আশঙ্কা, রাজ্য সিপিএম যে ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে, এ ভাবে চললে জেলা নেতৃত্বও রাজ্য কমিটির কথা মানবে না।

রাজ্য পার্টির মধ্যে জোটপন্থীরা সংখ্যায় বেশি বুঝে রাতেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে হয়েছে ইয়েচুরি, কারাটদের। বিতর্ক শেষে আজ, রবিবার বৈঠকের শেষ দিনে ভবিষ্যতে এগোনোর দিশা দিতে হবে তাঁদের। সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি অবশ্য গোড়া থেকেই জোটের পক্ষে। কিন্তু পলিটব্যুরোর মধ্যে সংখ্যাগুরু কারাট বাহিনীর চাপে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে না যাওয়ার জন্য নোট পাঠিয়ে আলিমুদ্দিনকে হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছিল তাঁকে। বৈঠকের শুরুতে এ দিন সেই নোট পড়েও শুনিয়েছেন ইয়েচুরি। আর তার পরেই সরব হয়েছেন সূর্য।

মঞ্চে বসা প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদককে ইঙ্গিত করে সূর্যবাবু বৈঠকে বলেছেন, গত ডিসেম্বরে কলকাতা প্লেনামের সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় নির্বাচনী বোঝাপড়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কারাট বলেছিলেন, রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু হয় না। কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া অসম্ভব হলে তখনই বলে দিতে পারতেন! তার পরে পলিটব্যুরো বাংলার পরিস্থিতি বিচার করতে দেরি করেছে। ইয়েচুরির সঙ্গে সূর্যবাবুর সমীকরণ মসৃণ হলেও কৌশলে পলিটব্যুরোকে বিঁধতে সূর্যবাবু উদাহরণ দিয়েছেন, সিঙ্গুরে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে একই সময়ে মঞ্চে উঠবেন না বলে সাধারণ সম্পাদক চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছিলেন! এ ভাবে জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে। রাজ্য সম্পাদকের মতে, গাড়ি যখন দ্রুত গতিতে চলছে, সেই সময়ে পলিটব্যুরোর কথা শুনে ব্রেক করতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতো! বাংলায় যে দু’কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ জোটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সূর্যবাবু এই সুর বেঁধে দেওয়ার পরেই রাজ্য কমিটির জোটপন্থীদের ব্যাটিং শুরু হয় নেপালদেব ভট্টাচার্যকে দিয়ে। যিনি বলেন, ধরা হাত এখন ছাড়া যাবে না। প্রশ্ন উঠেছে বাম শরিকদের ভূমিকা নিয়েও।

cpm politburo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy