Advertisement
E-Paper

করোনাতেই থামল লড়াই, প্রয়াত শ্যামল

শ্যামলবাবুর মৃত্যুতে শোক-বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০৪:০১
শ্যামল চক্রবর্তীকে শেষশ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

শ্যামল চক্রবর্তীকে শেষশ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

লড়াই থেমে গেল বাম ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর। পুরনো শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছিল করোনা। পরপর দু’বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রয়াত হলেন ৭৭ বছরের নেতা। কোভিড প্রোটোকল মেনে সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহে লাল পতাকা বিছিয়ে কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দিয়েছেন শ্যামলবাবুর পরিবার ও দলীয় নেতারা। রাতেই বিধি মেনে সৎকার সম্পন্ন হয়েছে।

ভিডিয়ো কনফারেন্সে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গত ২৫ ও ২৬ জুলাই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য দফতরে গিয়েছিলেন শ্যামলবাবু। তার দিনদুয়েক পরে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন উল্টোডাঙার এক হাসপাতালে। স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা তাঁর দীর্ঘ দিনের, শ্বাসকষ্টও। এ বার ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরে করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। গত দু’দিন দেওয়া হয়েছিল ভেন্টিলেশনে, কিডনির সমস্যাও দেখা দিয়েছিল। হাসপাতালে এ দিন দুপুর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের অনুমতি নিয়ে সন্ধ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তাঁর মরদেহে দলের পতাকা বিছিয়ে দেওয়া হয়। শ্যামলবাবুর স্ত্রী, আন্দোলনের সতীর্থ শিপ্রা ভৌমিক প্রয়াত হয়েছেন বহু বছর আগে। একমাত্র কন্যা ঊষসী অধ্যাপনা এবং অভিনয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

শ্যামলবাবুর মৃত্যুতে শোক-বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শ্যামলবাবুর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতের ক্ষতি হল।’’ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘প্রকৃত অর্থে এক জনদরদি শ্রমিক নেতা ছিলেন। আপাদমস্তক ভদ্র ও মধুর স্বভাবের মানুষ।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো, রাজ্য কমিটি এবং সিটুর পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, আরএসপি-র বিশ্বনাথ চৌধুরী, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, পিডিএসের সমীর পূততুণ্ড-সহ রাজনৈতিক জগতের অনেকেই।

ছয়ের দশকে রাজ্যে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের দিকপাল নেতা হিসেবে উত্থান শ্যামলবাবুর। সেই সময়ে বিমান বসু, শ্যামল, সুভাষ চক্রবর্তী ও দীনেশ মজুমদারকে বাম আন্দোলনের চার মূর্তি বলা হত। বয়সে কিছু বড় বিমানবাবু ছিলেন তাঁদের নেতা, আবার একাধারে বন্ধুও। সুলেখক শ্যামলবাবু সেই সময়ের কাহিনি লিখে গিয়েছেন ‘৬০-৭০ ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক বইয়ে। শ্যামল-সুভাষ-দীনেশই পরে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ে দায়িত্ব দিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে আসার জন্য তৎপর হয়েছিলেন, সেই অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্ত। এঁদের মধ্যে প্রথমে দীনেশ, পরে সুভাষ প্রয়াত। শ্যামলবাবুর বিদায়ে আন্দোলনের ওই পর্বের সেনানী হিসেবে একা হয়ে গেলেন বিমানবাবু। যিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত-সহ শিল্প ক্ষেত্র এবং শ্রমিকদের উপরে যে ভাবে আঘাত নেমে এসেছে বর্তমান সময়ে, সেই সময়ে শ্যামলের চলে যাওয়া বিরাট ক্ষতি।’’

শেষযাত্রায় শ্যামল চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।

পূর্ববঙ্গ থেকে এসে সঙ্গতিহীন পরিবার প্রথমে উঠেছিল চাকদহে। তার পরে দমদমে চলে এসে শ্যামলবাবু ভর্তি হন মতিঝিল কলেজে। সেখান থেকেই সুভাষের সঙ্গে জুটি, আন্দোলনের আঙিনায় আসা। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৬০ সালে। সুবক্তা শ্যামলবাবুকে জ্যোতি বসু, প্রমোদবাবুরা সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসেন ১৯৭৮ সালে। বিধায়ক হয়েছেন চার বার। জ্যোতিবাবুর মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন পরিবহণ দফতরের। জ্যোতিবাবুর পরামর্শেই ট্রেড ইউনিয়নে বিদ্যুৎ এবং পরিবহণ শ্রমিকদের সংগঠিত করার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। আবার শিল্পায়নের যাত্রাপথ শুরুর সময়ে অনিল বিশ্বাস, বুদ্ধবাবুদের ইচ্ছায় তাঁকে সিটুর রাজ্য সভাপতির দায়িত্বে নিয়ে আসা হয় একবগ্গা জঙ্গি আন্দোলন থেকে ট্রেড ইউনিয়নকে যুক্তিবাদী পথে নিয়ে আসার জন্য। সিটুর রাজ্য সভাপতি পদে ২০১৭ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর ছিলেন শ্যামলবাবু। মাঝে এক বার রাজ্যসভার সাংসদ। আর ২০০২ সালের পার্টি কংগ্রেস থেকে আমৃত্যু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সিটুর সর্বভারতীয় কমিটির অন্যতম নেতা।

পড়তে-লিখতে ভালবাসতেন। রাজনৈতিক কাজের ফাঁকেই শিশু সাহিত্যে হাত পাকিয়েছেন। দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী অসুস্থতাকে জয় করেই তাঁর অদম্য লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে এ দিন কুর্নিশ জানিয়েছেন সূর্যবাবু-সহ বাম নেতারা।

Death CPM Shyamal Chakraborty Coronavirus in West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy