প্রশাসনের বাধা অগ্রাহ্য করেই সভা করা হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান বদলে ফেলল তারা। শনিবারই তারা ফের জানিয়ে দিল, রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে ১৪৪ ধারা ভেঙে, জোর করে কোনও সভার আয়োজন করা হবে না। সভাস্থলের উদ্দেশে রওনা হলেও যেখানে পুলিশের বাধা পাবেন, সেখানেই থেমে যাবেন তাদের সদস্যেরা। চেষ্টা হবে, সেখানেই সভা করার। এই পরিস্থিতিতে এ দিনই কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর ছাড়া গোটা উত্তর দিনাজপুরে আগামী সোমবার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক রণধীর কুমারের দাবি, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঘটনা হল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ, রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে ওই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সভাস্থল ও তার চার দিকে ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় এ দিন মঞ্চ তৈরির কাজ বন্ধ রাখে ভিএইচপি। তাদের তরফে ওই সভার কার্যকর্তা বিজয়কৃষ্ণ তালুকদার জানান, জোর করে সভা করা হবে না। আজ বেলা ১টা নাগাদ সংগঠনের সদস্যেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সভাস্থলের দিকে রওনা হবেন। পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা আর এগোবেন না। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণধীর কুমার জানান, ১৪৪ ধারা ভাঙা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভা করা নিয়ে হঠাৎ অবস্থান বদল কেন? বিজয়কৃষ্ণবাবুর জবাব, ‘‘সভার পক্ষে আদালতের রায় রয়েছে। তা-ও রাজ্য সরকার একটি রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্রমূলক নির্দেশে বেআইনি ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে আমাদের সভা বানচাল করতে চাইছে। আমরা পুলিশ-প্রশাসনের প্ররোচনায় পা দিয়ে বিরোধে যাব না। প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’
রায়গঞ্জের এই সভাতেই আসার কথা ছিল ভিএইচপির নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার। কিন্তু ভিএইচপি-র অভিযোগ, তিনি যাতে ওই জেলায় ঢুকতে না পারেন, তার জন্য গত বুধবার ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক ভিএইচপির সভায় মাইক বাজানোর অনুমতিও প্রত্যাহার করে নেন। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সফর বাতিল করেন সংগঠনের আন্তর্জাতিক কার্যকরী সভাপতি প্রবীণ তোগাড়িয়া। তাঁকে ছাড়াই শনিবার কলকাতার হরিয়ানা ভবনে সাংগঠনিক কর্মসূচি সারে ভিএইচপি।
পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘প্রবীণ তোগাড়িয়ার বাংলায় আসার সম্ভাবনাকে ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সংঘর্ষ চায় না। প্রবীণভাইও চান না। সে জন্য সরকারের অগণতান্ত্রিক নির্দেশের প্রতিবাদে কর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’
মেদিনীপুর শহরের ভিতরেও ভিএইচপির সহযোগী ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ এবং বজরং দলের কর্মসূচি বানচাল করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রামনবমী উত্সব উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শোভাযাত্রা বেরোনোর কথা ছিল প্রথমে। সব শোভাযাত্রা কলেজ মাঠে পৌঁছে যাওয়ার পরে সভা হওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। শুরু হয় মঞ্চ বাঁধা। কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় শোভাযাত্রা বা সভা হয়নি। পুলিশকর্মীরা দাঁড়িয়ে থেকে মঞ্চ খোলান। সকাল থেকে ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ ও বজরং দলের ২০ জন কর্মকর্তাকে থানায় ডেকে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ।
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রতি বছর এই শোভাযাত্রা বেরোয়। শাসক দলের চাপেই পুলিশ ওই অনুষ্ঠান করতে দেয়নি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় অভিযোগ মানেনি। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশের কাছে শহরের মানুষ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে দাবিপত্র দিয়েছিলেন। তাই মঞ্চকে লিখিত ভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয় যে অনুমতি মিলবে না।” অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই মঞ্চ ও বজরং দলের কর্মকর্তাদের থানায় ডাকা হয়েছিল বলেও জানান পুলিশ সুপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy