রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি সমর্থকদের হামলা ও পাল্টা হামলা এবং গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগের পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন সিসিটিভি-র ফুটেজে কাউকে গুলি চালাতে দেখা যায়নি। লাঠিসোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কয়েকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও এখনও পর্যন্ত তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ছাত্র পরিষদের অবশ্য অভিযোগ, টিএমসিপি সমর্থকেরা ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সামনে তাঁদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় সেই ছবি ধরা পড়েনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে পড়ুয়া ও এলাকার বাসিন্দারা ওই দিন একাধিকবার গুলির শব্দ পেয়েছেন। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করল না, সেই প্রশ্ন তুলেছে ছাত্র পরিষদ।
বুধবার শিলিগুড়ি থেকে রায়গঞ্জে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি। এদিন ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করা ও তাঁদের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান। অনিলবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা। এখানে বহিরাগতরা ঢুকে মারপিট করবে এটা কোনওমতে বরদাস্ত করা হবে না। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পুলিশের কাছে একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, গোলমালের ঘটনার দিন সিসিটিভির ফুটেজ তিনি এখনও দেখেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শীঘ্রই সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখব। সে রকম সূত্র পেলে পুলিশকে জানাব। আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে গুলি চলে থাকলে দুষ্কৃতীরা কড়া শাস্তি পাক।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উপাচার্য এদিন পুরো ঘটনার একটি রিপোর্ট আচার্য রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তিনি উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক রণধীর কুমার ও পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার সহযোগিতা চেয়েছেন। নতুন করে গোলমাল রুখতে এদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
উপাচার্যের কথায়, ‘‘অন্য দিনের তুলনায় এদিন পড়ুয়াদের হাজিরা কম ছিল। মনে হচ্ছে গোলমালের আতঙ্কে তাঁরা এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি।’’ এদিন, অভিযুক্ত টিএমসিপি সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিতে এদিন দুপুরে যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামেন সংগঠনের শতাধিক সমর্থক। যুব কংগ্রেসের সমর্থকেরা রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে প্রায় আধঘন্টা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ সুপারের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। পুলিশ সুপার দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অরিন্দমবাবুর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই টিএমসিপি সমর্থকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র পরিষদের নেতা সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে তাঁদের গুলি করে খুনের চেষ্টা করলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘পুলিশ সব পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। সিসিটিভি-র ফুটেজে গুলি চালানোর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুলিশ আইন মেনেই সব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’
উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নব্যেন্দু ঘোষ ও সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সাহাকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে, নব্যেন্দুবাবু ও প্রসেনজিৎবাবু সহ ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের বিরুদ্ধেও টিএমসিপি-র সমর্থকদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও গুলি করে খুনের চেষ্টার পাল্টা অভিযোগ ওঠে।