Advertisement
E-Paper

জৌলুস হারাচ্ছে শিল্পাঞ্চলের পুজো

ঘুড়িতে বিশ্বকর্মার মুখ। তাতে সিঁদুরের টিপ লাগিয়ে, ফুল, বেলপাতা ছুঁইয়ে দু’হাত দিয়ে আকাশের দিকে উড়িয়ে দিলেন পুরোহিত। মর্ত্যে পুজো তো হচ্ছেই। আড়ম্বরও হচ্ছে সাধ্যমত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৬
শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ঘুড়িতে বিশ্বকর্মার মুখ। তাতে সিঁদুরের টিপ লাগিয়ে, ফুল, বেলপাতা ছুঁইয়ে দু’হাত দিয়ে আকাশের দিকে উড়িয়ে দিলেন পুরোহিত। মর্ত্যে পুজো তো হচ্ছেই। আড়ম্বরও হচ্ছে সাধ্যমত। কিন্তু বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের দুর্দশার খবর কি স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে? আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ির দিকে বিশ্বকর্মার নজর পড়ার আশায় তাকিয়ে বন্ধ কারখানার শ্রমিকেরা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের নিক্কো কারখানার শ্রমিকদের এই ভাবনাটা দোকান থেকে বিশ্বকর্মার মুখ আঁকা ঘুড়ি কিনে আনার পরেই এসেছিল। তাই দেরি না করে ঘুড়ি উড়িয়েই রুগ্ন শিল্পাঞ্চলে সৃষ্টির দেবতার আবাহন হল এ বার।

রাজ্যের অন্যতম বড় শিল্পাঞ্চল ব্যারাকপুর-কল্যাণীতে এক সময় দুর্গা পুজোর থেকেও বড় উৎসব ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। বরাহনগর থেকে কল্যাণী পর্যন্ত গঙ্গার পার বরাবর দুই জেলার শিল্পাঞ্চলের হাজার দু’য়েক কারখানা আলোর মালায় সাজত। উঁচু পাঁচিল ঘেরা বড় কারখানাগুলি ভিতরের দানবীয় যন্ত্র আর কর্মকাণ্ড দেখার বাসনা কারখানার বাইরের সব মানুষেরই থাকত। কিন্তু ঢোকার অনুমতি যে শুধু বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। এই দিন সব কারখানায় সবার জন্য অবারিত দ্বার। আর ঢালাও খাওয়া দাওয়া। এক সময় বড় কারখানাগুলোতে কর্মীদের পরিবারের শিশুদের জন্য বিশ্বকর্মা পুজোয় বিশেষ অনুষ্ঠান এবং উপহারের ব্যবস্থাও থাকত। মহালক্ষ্মী কটন মিল, বেঙ্গল এনামেল, জেনসন অ্যান্ড নিকেলসন, গৌরীপুর জুটমিল বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য বিখ্যাত ছিল। ওই এলাকায় সে দিন সবার বাড়িতে অরন্ধন চলত। কারখানার এক এক বিভাগে পুজো। মালিকের পুজোয় জাঁকজমক আর জৌলুস একটু বেশি। শ্রমিকদের হয়তো একটু কম। কিন্তু মলিক আর শ্রমিকদের পুজো মিলে যেত যখন প্রসাদ বিলি হত।

একসময় মহালক্ষ্মী কটন মিলে সুপারভাইজার ছিলেন অবনী সেন। এখন বয়স হয়েছে, স্মৃতিরও ক্ষয় হয়েছে অনেক। বললেন, ‘‘এই শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজো নিয়ে ইতিহাস লেখা যায়। মনে আছে আগে মেলা বসত গঙ্গার ধারে। কাঠের নাগরদোলা, মাটির পুতুল, মুড়কি, তেলে ভাজা, জিবে গজা, টুকিটাকি কত কিছু মিলত! ওই দিন মেশিনগুলোতে তেল-সিঁদুর লাগিয়ে পুজো পাঠ করে কারখানাগুলো যেন নতুন উদ্দমে চলার প্রস্তুতি নিত। দেখার মতো দৃশ্য ছিল। আর ছিল প্রানভরা আনন্দ। সন্ধ্যায় জলসা অথবা থিয়েটার। শ্রমিকদের পরিবার থেকেও যাত্রা হত। এখন সব স্মৃতি আর নিভন্ত চুল্লির শ্মশান।’’ শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘আগে শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজো হত কারখানায় আর এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অসংখ্য রিকশা আর অটো স্ট্যান্ডে পুজোর ছড়াছড়ি।’’

ব্যারাকপুর ছাড়িয়ে কল্যাণীতেও এ বার কারখানাগুলোয় বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুস অপেক্ষাকৃত কম। বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখানেও। কিছু ধুঁকছে। পুজো হচ্ছে কম-বেশি। শ্রমিক পরিবারগুলো ভিড় করেছে পুজো মণ্ডপে। কোথাও খিচুড়ি আবার কোথাও চাঁদা তুলে ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন মেনু হয়েছে প্রসাদের পর দুপুরের আহারে।

গঙ্গার ধার বরাবর ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্প তালুকে এখন কলকারখানার চেহারা বড়ই রুগ্ন। বড় বাজেটের বিশ্বকর্মা পুজো তাই এখন আর বিশেষ নজরে পড়ে না। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ২১টা চটকলের প্রায় সবক’টিই শ্রমিক-মালিক বিরোধ এবং বকেয়া পাওনার সমস্যায় জর্জরিত। পুজো হচ্ছে ঠিকই। ধুনুচি নাচ, প্রদীপ জ্বালিয়ে পুরোহিত আরতি করছেন। কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারটা বড্ড গাঢ়। হাজার হাজার শ্রমিকের কান্না সেই অন্ধকারে বন্দি। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় গৌরীপুর কুলি লাইনে এখনও প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক বাস করেন। যাঁদের পরিবার নিয়ে মোট সংখ্যাটা দু’হাজারের কাছাকাছি। গৌরীপুর চটকল ছাড়াও, গৌরীপুর থার্মাল পাওয়ার, নৈহাটির বিখ্যাত রঙ কারখানা জেনসন নিকেলসন, কন্টেনার্স অ্যান্ড ক্যাপস-এর শ্রমিকেরা থাকেন এই কুলি লাইনে। এই কারখানাগুলি অবশ্য বহু দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বকেয়া প্রায় কিছুই পাননি শ্রমিকেরা। তবু আশা করেন কারখানা যদি কখনও খোলে! অথবা অন্য কোনও কারখানাও যদি হয় বন্ধ কারখানার জমিতে।

viswakarma puja industrial area viswakarma puja industrial area
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy