Advertisement
E-Paper

‘কালীঘাটের কাকু’র গলার স্বরের নমুনা নেওয়া হয়নি এখনও, ‘অসুস্থ’ সুজয়কে নিয়ে ফাঁপরে পড়েছে ইডি

ইডি সূত্রে অভিযোগ, আদালত ওই নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে সরকারি ভাবে জেল হেফাজতে থাকলেও, কার্যত টানা দু’তিন দিনও জেলে থাকেননি সুজয়।

Sujay Krishna Bhadra.

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। —ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৫০
Share
Save

গত ১৪ জুলাই আদালতের নির্দেশ ছিল, তিন দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র গলার স্বরের নমুনা। কিন্তু তার পর থেকে দু’মাসেরও বেশি সময় পার। এখনও সেই নমুনা জমা দেওয়া তো দূর, তা সংগ্রহ করার কথা পর্যন্ত শোনা যায়নি স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়ের কাছ থেকে।

ইডি সূত্রে অভিযোগ, আদালত ওই নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে সরকারি ভাবে জেল হেফাজতে থাকলেও, কার্যত টানা দু’তিন দিনও জেলে থাকেননি সুজয়। স্ত্রী মারা যাওয়ার কারণে ১৭ দিন প্যারোলে মুক্ত ছিলেন। বাকি দিনের মধ্যে বেশির ভাগও তাঁর হাসপাতালে কেটেছে একের পর এক ‘অসুস্থতা’র কারণে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটি সূত্রে দাবি, মাঝের এই সময়ে এক অসুস্থতা সারিয়ে জেলে ফিরেই ফের আর এক অসুস্থতার কথা বলেছেন তিনি। সেই কারণেই নমুনা সংগ্রহ এত দিনেও সম্ভব হয়নি বলে ইডি সূত্রে দাবি।

সুজয়ের বিরুদ্ধে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে ‘প্রভাবশালী’-যোগের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রে ৭ জুলাই তিনি জেলে থাকাকালীন আদালতে তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহের আবেদন জানায় ইডি। প্রথমে তা দিতে রাজি হননি সুজয়। আদালতে তাঁর আইনজীবীরা ইডি-র আবেদনের বিরোধিতা করেন। কিন্তু ১৪ জুলাই ইডি-র আবেদন মঞ্জুর করে কোর্ট। নির্দেশ দেয় তিন দিনের মধ্যে সেই নমুনা জমা দিতে।

এই নির্দেশ আসার দু’দিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সুজয়। ইডি হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু, হাসপাতালে এই নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ‘সাউন্ড প্রুফ’ ঘর পাওয়া যায়নি। অতএব জেলে ফেরার অপেক্ষা। কিন্তু সুজয় জেলে ফেরার পরেই আচমকা মারা যান সুজয়ের স্ত্রী। সেই কারণে ১৭ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান সুজয়। প্যারোল শেষে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ফিরে ফের ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন সুজয়। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরে সুজয়ের আইনজীবীদের আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর বাইপাস সার্জারি হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তার পরে জেলে ফিরলেও, এক দিনের মধ্যে তিনি ফের ভর্তি হন এসএসকেএম হাসপাতালে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেও ‘সাউন্ড প্রুফ’ ঘরের খোঁজ করা হয়েছিল। কিন্তু জানানো হয়, সংশোধনাগারে তেমন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল ও সংশোধনাগারের সেই বক্তব্য আদালতে জানানো হয়েছে। ইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘সাউন্ড প্রুফ রুম বলতে একটি মোটা কাচের দেওয়াল থাকা ঘরের প্রয়োজন। যেখানে বাইরের কোনও শব্দ ভিতরে আসবে না। ভিতরের কোনও শব্দও বাইরে যাবে না। গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহের সময়ে এক জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকবেন বলেও আদালতের নির্দেশ।’’

ইডি সূত্রে অভিযোগ, নানা টালবাহানায় গলার স্বরের নমুনা দেওয়া এড়িয়ে যেতে চাইছেন সুজয়। এই মুহূর্তে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখন ফের সেই নমুনা সংগ্রহের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে ইডি সূত্রে দাবি। তাঁর সাম্প্রতিক মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যবেক্ষণের পরে আদালতে ওই নমুনা সংগ্রহের জন্য ফের আবেদন করা হবে, দাবি তদন্তকারীদের সূত্রে। ইডির এক কর্তা বলেন, ‘‘ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’

কিন্তু এই নমুনা গুরুত্বপূর্ণ কেন? ইডি সূত্রে দাবি, ৩০ মে গ্রেফতারের পরে সুজয়ের দু’টি মোবাইল থেকে একাধিক ভয়েস কল রেকর্ডিং মেলে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে ওই সব ভয়েস কল রেকর্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আদালতে দাবি করেন ইডি-র আইনজীবীরা। নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘নাম জড়ানো’ বেসরকারি সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের উঁচু পদে দীর্ঘদিন কাজ করা সুজয়ের কণ্ঠস্বরে অনেক তালার চাবি খুলতে পারে বলে ইঙ্গিত ইডি সূত্রেও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sujay Krishna Bhadra Enforcement Directorate

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}