ভোটার তালিকায় ‘জল’ বার করতে গিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের যে পদক্ষেপের উদাহরণ প্রকাশ্যে আসছে, তাতে উৎকণ্ঠা বাড়ছে আধিকারিক মহলে। কমিশন সূত্রের খবর, বিহারে ভোটার তালিকায় নিবিড় বিশেষ সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় কমবেশি এক হাজার ভোটকর্মী-আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে। অনেকের হয়েছে জেলও। এ রাজ্যেও এসআইআর শুরুর প্রস্তুতি চালাচ্ছে কমিশন। ঘটনাচক্রে, তার আগেই চার ভোট-আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পর বিশ্লেষকদের একাংশের প্রশ্ন, তেমন পরিস্থিতিতে এ রাজ্যেও কি ‘বিহার-মডেল’ অনুসরণ করবে কমিশন।
বিহারে এসআইআর-এর প্রাথমিক কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক এই পর্বে ইতিমধ্যেই প্রায় এক হাজার ভোটকর্মী-আধিকারিকের বিরুদ্ধে হয়েছে আইনি পদক্ষেপ। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছেন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) এবং বিএলও সুপারভাইজ়ার। তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর, কিছু সংখ্যক বিএলও-র বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত, অনেকে আবার নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হয়েছেন বলেও খবর। ভোটার তালিকায় বড় মাপের গরমিলের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ৫০ জনের জেলও হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কমিশন যে ভাবে তার আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন।’’
কী ভাবে কারও অপরাধ নির্ধারণ করছে কমিশন? কমিশন কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন অনলাইনে ভোট সংক্রান্ত পুরো কাজহওয়ায় প্রত্যেকের অবস্থানের ছাপ থাকছে। প্রাথমিক গরমিলের অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে উঠছে, তাঁদের রিপোর্ট যাচ্ছে কমিশনে। সেখানে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনলাইন বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখছেন অভিযুক্তদের কাজ। কী ধরনের গরমিল হয়েছে, তার পৃথক মূল্যায়ন করছেন ভোটার তালিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। তার পরে সব রিপোর্ট একসঙ্গে পৌঁছচ্ছে কমিশনের সর্বোচ্চ মহলে। সেখানে সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কী পদক্ষেপ করা হবে। তার পরে তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিইও) জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী কর্মীদের বদলে স্থায়ী সরকারি কর্মীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করার কারণে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে থেকে যায়। না হলে কোনও গরমিলে চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী কাউকে দায়বদ্ধকরা মুশকিল।’’
১৯৫০ সালের ‘রিপ্রেজ়েন্টেশন অব পিপলস’ (আরপি) আইনের ১৩-সিসি ধারা অনুযায়ী ভোটের যে কোনও কাজে জেলাশাসক-সহ নিযুক্ত বাকি সব কর্মী-আধিকারিক কমিশনের ‘ডেপুটেশনে’ থাকেন। ওই আইনের ৩১ এবং ৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নির্বাচনী যে কোনও কর্তব্যে গাফিলতি প্রমাণিত হয়ে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে কমিশন। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জেল, জরিমানা বা দু-ই হতে পারে। তাতে রাজ্য সরকারের অনুমোদন নিতে হয় না কমিশনকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)