E-Paper

শ্রমিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, কেরল-বার্তা বামের

অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার নামে প্রকৃত পক্ষে গরিব শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বিজেপি, এই অস্ত্রেও শাণ দিচ্ছে সিপিএম। বাম-শাসিত কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নেওয়া কিছু প্রকল্পও তাদের বাড়তি হাতিয়ার।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:১১
বাম-শাসিত কেরলে সাধারণ শিক্ষা ও শ্রম, দুই দফতরই রয়েছে ভি শিবনকুট্টির হাতে।

বাম-শাসিত কেরলে সাধারণ শিক্ষা ও শ্রম, দুই দফতরই রয়েছে ভি শিবনকুট্টির হাতে। —প্রতীকী চিত্র।

একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে এখন উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে যে রাজনৈতিক আবহ নির্মাণ হচ্ছে, সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষের তোপ দেগে ময়দানে নেমে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই প্রশ্নে সরব বাম ও কংগ্রেসও। তবে এরই পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার নামে প্রকৃত পক্ষে গরিব শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বিজেপি, এই অস্ত্রেও শাণ দিচ্ছে সিপিএম। বাম-শাসিত কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নেওয়া কিছু প্রকল্পও তাদের বাড়তি হাতিয়ার।

দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে চলতি পরিস্থিতি আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, বিভিন্ন বিজেপি-শাসিত রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও জোরালো করার পক্ষে মত দিয়েছেন কেরলের নেতারাও। তাঁদের বক্তব্য, কেরলে প্রায় ৩৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। রাজ্য সরকার বা দক্ষিণী ওই রাজ্যের মানুষ কেউই পরিযায়ীদের ‘অবাঞ্ছিত’ মনে করে না। পরে পলিটব্যুরোর তরফেও বলা হয়েছে, ‘দিল্লি, ওড়িশা, অসম, ছত্তীসগঢ় বা মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলার শ্রমিকদের আটক, নির্যাতন করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের যে কোনও প্রান্তেই নাগরিকদের যাওয়ার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত। এই রকম আক্রমণ করে সাধারণ মানুষের অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে’।

এই সূত্রেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বাংলার ও বাংলাভাষী মানুষের বিরুদ্ধে দিল্লির ফরমান আমরা মানব না! শুধু বাংলার বলে নয়, গরিব মানুষের উপরে ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছেন দিল্লির শাসকেরা। ছত্তীসগঢ়ে থানা থেকে ডেকে পাঠাচ্ছে বঙ্গ কলোনির লোকজনকে, যাঁরা ৫০ বছর ধরে আছেন এবং তাঁদের মধ্যে দলিত, তফসিলিরাও আছেন।’’ ভিন্ রাজ্যে বাংলা থেকে যাওয়া বহু মানুষ আছেন নানা পেশায়। তাঁদের একাংশ আর্থিক ভাবে তুলনায় স্বচ্ছল। কিন্তু রাজমিস্ত্রী-সহ যে সব গরিব মানুষ মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে গিয়েছেন, তাঁদেরই হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে সিপিএমের অভিযোগ।।

এই পরিস্থিতিতে চর্চায় আসছে কেরল সরকারের অবস্থান। বাম-শাসিত কেরলে সাধারণ শিক্ষা ও শ্রম, দুই দফতরই রয়েছে ভি শিবনকুট্টির হাতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা আরএসএস-বিজেপির নীতি। অন্যান্য রাজ্য থেকে এসে কেরলে প্রায় ৩৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই সম্প্রতি চালু হয়েছে ‘জ্যোতি’ প্রকল্প।’’ এই উদ্যোগের সুবাদে পরিযায়ী শ্রমিকদের (যাঁরা পরিবার নিয়ে গিয়েছেন) তিন থেকে ৬ বছরের বাচ্চাদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এবং ৬ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। এমন প্রকল্পের জন্য বেসরকারি কিছু সংস্থার সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে।

বিজেপি সরকারের কাজকর্মে শ্রমিকদেরই যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর মতে, “আমাদের এখান থেকে যাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁরা দক্ষ শ্রমিক। তাঁরা না-থাকলে যাঁরা নিয়ে যান, তাঁদের কাজ হবে না। আমাদের এখানেও দেড় কোটি বাইরের রাজ্যের লোক কাজ করেন। আমরা খুশি, তাঁরা কাজ করেন বলে।”

বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের নিগ্রহের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে প্রতিদিন অভিয‌োগ আসছে। আর কেরলে পরিযায়ী পরিবারের সন্তানদের মালয়ালম, হিন্দি ও ইংরেজিতে সড়গড় করার জন্য রয়েছে ‘রোশনী’ প্রকল্প। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ চালানোর মতো মালয়ালম শেখাতে রয়েছে ‘চাঙ্গাতি’ প্রকল্প। তবে পরিযায়ীদের নথিপত্র নিয়ে সমস্যা সেখানেও রয়েছে। সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের জন্মের শংসাপত্র ঠিক নেই। অনেকে জানান, গ্রামে বাড়িতে প্রসব হওয়ার পরে শংসাপত্র জোগাড় করা হয়নি। সরকারি একটি সূত্রের বক্তব্য, কেরল থেকে উপসাগরীয় দেশগুলিতে অনেক মানুষ কাজ করতে যান। তার বিপরীতে কেরলে আসা ভিন্ রাজ্যের মানুষকে নথিপত্রের সমস্যা সামলেই আতিথেয়তা দেয় সরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Bengali Migrants Labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy