বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ তুলে পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার বাড়াল তৃণমূল এবং কংগ্রেস। কিছুদিন ধরে এই বিষয়ে দুই দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভূমিকাকে ‘নেতিবাচক’ বলে মনে করছে কংগ্রেস। পাল্টা তৃণমূলও বলেছে, এই রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কংগ্রেসই বিরোধী ঐক্যের ভিত দূর্বল করেছে।
এই চাপানউতোরকে আরও মাত্রা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার সরাসরি কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন করেনি। কংগ্রেস সমঝোতা করে বলেই আমরা অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’’ তাঁর সাম্প্রতিক গোয়া সফর থেকেই এই কথা বলছেন মমতা। এ দিন তৃণমূলের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, বিজেপির সব থেকে বড় বিমা তো কংগ্রেস!
অন্যদিকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলকে নিশানা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলনেত্রীর ( মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমলে বাংলায় আরএসএসের শাখা ৫০০ থেকে ২৫০০ হয়েছে। ভবানীপুর এবং নাগপুরের মধ্যে সম্পর্ক আছে। তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে আরএসএস খুশিই হয়।’’ এর আগেও একাদিকবার অধীর প্রশ্ন তুলেছেন, মমতা বা তাঁর দল সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর নাম তুলে সমালোচনা বা বিরোধিতা করে না কেন?
এ দিন মধ্য কলকাতায় একটি কালীপুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস তো বাংলায় প্রতিটি আসনে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সেই কংগ্রেসকে ভরসা করা যাবে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এই লড়াইয়ের পরেও কী করে আশা করে যে আমরা অন্য জায়গায় কংগ্রেসকে সমর্থন করব?’’ এ ব্যাপারে দলের মনোভাব স্পষ্ট করে তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, ‘‘নীতি তো সব সময় একই হয়।’’
এই প্রসঙ্গে রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ১৯৮৯ সালের ব্রিগেড ময়দানে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সমাবেশের কথা টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএম অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরেছিল, তারাই আজ সেই সিপিএমের হাত ধরছে।’’ জবাবে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল- বিজেপির রাজনৈতিক ডিএনএ-এর কোনও ফারাক নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মোদী- দিদির স্লোগানেও কোনও ফারাক নেই। মোদী চান কংগ্রেসমুক্ত ভারত। দিদি চান কংগ্রেসমুক্ত বিরোধী।’’
২০১২ সালে তৃণমূলের ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা টেনে এদিন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাদের সঙ্গেও করেছে। তাই আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম।’’ অধীরের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেসের জন্যই তৃণমূলনেত্রীর রাজনৈতিক উত্থান। সেই তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন, আরএসএসের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চান না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘২০০৩ সালে দিদিই তো আরএসএসকে দেশপ্রেমী বলেছেন। তার জন্য ভুল স্বীকার করেননি তিনি।’’