Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাইলটের চোখে কি ভ্রান্তির ধোঁয়া

পাহাড়ে নয়, বিমানের লেজের দিক থেকে যে-‘ধোঁয়া’ নিয়ে শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে হইচই কাণ্ড হয়ে গেল, তা আদৌ ধোঁয়া কি না, সংশয়ে বিশেষজ্ঞেরা। বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কর্তাদের মতে, ধোঁয়া দেখেছেন বলে যে-পাইলট দাবি করছেন, সম্ভবত তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়েছিল।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

পর্বতো বহ্নিমান ধূমাৎ।

ধোঁয়া দেখেই বোঝা যায়, পাহাড়ে আগুন লেগেছে কি না। কিন্তু ধোঁয়া দেখা গেল, অথচ সেই ‘ধোঁয়া’র পুরোটাই যদি হয় ভুয়ো, ভ্রম?!

পাহাড়ে নয়, বিমানের লেজের দিক থেকে যে-‘ধোঁয়া’ নিয়ে শনিবার কলকাতা বিমানবন্দরে হইচই কাণ্ড হয়ে গেল, তা আদৌ ধোঁয়া কি না, সংশয়ে বিশেষজ্ঞেরা। বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কর্তাদের মতে, ধোঁয়া দেখেছেন বলে যে-পাইলট দাবি করছেন, সম্ভবত তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়েছিল।

ডিজিসিএ-র কাছে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, শনিবার ইম্ফল থেকে এসে কলকাতায় নামার পরে ইন্ডিগোর বিমানের পাইলট সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভুটান এয়ারলাইন্সের বিমানের লেজের কাছে ধোঁয়া দেখতে পান। তিনি ভুটান এয়ারলাইন্সের পাইলটকে তা জানালে জরুরি বার্তা যায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এ। বিমানের আপৎকালীন দরজা খুলে রবারের স্লিপ নামিয়ে বার করে আনা হয় ৬১ জন যাত্রীকে।

ডিজিসিএ জোর দিচ্ছে দু’টি বিষয়ে।

• আধুনিক বিমানে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে সর্বাগ্রে ককপিটে সতর্কবার্তা পাওয়ার কথা পাইলটের। শনিবার ওই এয়ারবাস-৩১৯ বিমানের পাইলট ককপিটে তেমন কোনও বার্তা পাননি।

• পাইলট ককপিটে ছিলেন বলেই লেজ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে কি না, সেটা তাঁর নিজের চোখে দেখা সম্ভব ছিল না। দেখার কথা বিমানসেবিকাদের। রবিবার ওই উড়ান সংস্থার এক অফিসার জানান, পাইলটের নির্দেশে বিমানসেবিকারা খুঁটিয়ে দেখেও ধোঁয়ার খোঁজ পাননি।

ডিজিসিএ-র এক কর্তার কথায়, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারেরাও পরীক্ষা করে তেমন কিছু পাননি। উড়ান সংস্থা জানিয়েছে, ধোঁয়া নিজে নিজেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। পাইলট ঝুঁকি না-নিয়ে এটিসি-কে জরুরি বার্তা পাঠান। ফলে আদৌ ধোঁয়া বেরিয়েছিল কি না, তা নিয়েই আমাদের সংশয় আছে।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমের দুপুরে ককপিটে বসে অনেক সময়েই সামনে ধোঁয়ার মতো কিছু একটা দেখতে পান পাইলটেরা। সেটা আদতে মাটি থেকে উঠে আসা তাপ। সেই তাপের জেরে তৈরি জলীয় বাষ্পের জন্য ককপিট থেকে সামনেটা ধোঁয়া ধোঁয়া মনে হয়। শনিবার ইন্ডিগোর পাইলটের চোখের সামনে এই ধরনের কিছু ঘটে থাকবে বলে কর্তাদের অনুমান। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত বলেই দুই পাইলটকে এর জন্য দোষারোপ বা দায়ী করছে না ডিজিসিএ।

বিমানটি ব্যাঙ্ককে পাঠানো হয়েছে। দরজার সঙ্গে রবারের স্লিপ (শ্যুট) খুলে দিলে তা নতুন করে না-লাগালে বিমান ওড়ার অনুমতি পায় না। কলকাতায় সেই সুবিধা নেই। ব্যাঙ্ককে ভুটান এয়ারলাইন্সের বিমানের মালপত্র ও ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। ডিজিসিএ বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না। বিমানটি যে-দেশের, সেখানকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে তদন্ত করতে পারে। সেই জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশন অব ভুটান (সিএবি)-এর প্রতিনিধিরা কলকাতায় আসতে পারেন। সংশ্লিষ্ট পাইলট ইতিমধ্যে পারো পৌঁছে গিয়েছেন। সিএবি-র কাছে রিপোর্টও পেশ করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhutan Airlines Smoke Error Pilot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE