E-Paper

অর্ধেক বছরই জলমগ্ন বাসন্তীর প্রাথমিক স্কুল

আমঝাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলটির ক্লাসঘরের সামনে যে টানা বারান্দা, তার ঠিক মুখেই জমে রয়েছে কয়েক মাসের পুরনো জল। যেখানে ডেঙ্গি মশার লার্ভাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে সাপ-খোপ।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:০৮
An image of a school

জলে ডুবে থাকা স্কুলে আসছে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

মোজা-জুতো পরে স্কুলে আসা ভুলেই গিয়েছে সুচিত্রা হালদার, দীপ্তি নস্করেরা। স্কুলবাড়িতে ঢোকার মুখেই অর্ধেক বছর ধরে জমে থাকা জল ডিঙিয়ে ঢুকতে হয় যে প্রাথমিকের এই পড়ুয়াদের। তাই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সরকার থেকে যে জুতো দেওয়া হয়েছে, তা আপাতত তোলা আছে ঘরে। এখন খালি পায়েই স্কুলে আসে সুচিত্রা-দীপ্তিরা।

শুধু কি তাই? আমঝাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলটির ক্লাসঘরের সামনে যে টানা বারান্দা, তার ঠিক মুখেই জমে রয়েছে কয়েক মাসের পুরনো জল। যেখানে ডেঙ্গি মশার লার্ভাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে সাপ-খোপ। সেই দিকে সদা সতর্ক নজর রাখতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। সামলে রাখতে হয় স্কুলের ২২৭ জন খুদে পড়ুয়াকে। যাতে আচমকা বিপদ না ঘটে যায়।

স্কুলের মাঠ পুরো সময়টায় ডুবে থাকে। তাই বার্ষিক ক্রীড়া হয় না। ডুবে থাকে স্কুলের টিউবয়েলও। ফলে পড়ুয়ারা বাড়ি থেকে জল আনে। আর মিড-ডে মিলের রান্না করতে বাইরের টিউবয়েল থেকে জল নিয়ে আসা হয়। আমপানে উড়ে গিয়েছিল মিড-ডে মিল খাওয়ার ঘরের ছাউনি। আজও তা সারানো হয়নি। ফলে পাত পেড়ে বসতে হয় কয়েক মাস ধরে জমে থাকা জলের সামনের বারান্দায়।

করোনার সময় থেকে যেখানে সরকারি স্কুলে পড়ুয়া কমতে শুরু করেছে, সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের এই স্কুলটিতে কিন্তু অন্য ছবি। অভিভাবকেরা এখনও বাড়ির ছোটদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী। অনিমেষ দাস, মন্টু মণ্ডলেরা জানান, এই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুবই যত্ন নিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ান। তাই পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হলেও তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। একই সঙ্গে জল জমে থাকার সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হোক, সেই দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

স্কুলের সহ-শিক্ষক সুনীল পরামান্য বলেন, “যে হেতু স্কুলের চারিদিকেই জল, তাই আমরা চেষ্টা করি যাতে পোকামাকড়, সাপ-ব্যাঙ স্কুলের মধ্যে ঢুকতে না পারে। তবুও মাঝে মধ্যেই এ সব ঢুকে পড়ে।’’ তবে পড়ুয়াদের যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে তাঁরা খেয়াল রাখেন।

দু’জন স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দু’জন অস্থায়ী শিক্ষক আছেন এই স্কুলে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র মণ্ডল জানান, জল জমে থাকার সমস্যা সমাধানে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে তদ্বির করেছেন। তিনি বলছিলেন, “গত ছ’বছর ধরে স্কুলকে এই জমা জলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। বর্ষাকালের শুরু থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জল জমে থাকে স্কুলের মাঠে, আশেপাশে। পড়ুয়ারা যাতে জলে পড়ে না যায়, তার জন্য স্কুলের সামনের দরজাগুলি তালাবন্ধ রাখতে হয়। এই সমস্যার সমাধান কি হবে না?”

আমঝাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান অলোক সর্দার বলেন, “সমস্যার কথা জানি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।” বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল আশ্বাস দিয়ে বলেন, “সমস্যার কথা জানতে পেরে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি। দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতে বলেছি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরকেও আমি চিঠি লিখে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।” বাসন্তীর বিডিও সৌগতকুমার সাহা বলেন, “দ্রুত যাতে সমাধান হয় সেইউদ্যোগ নেওয়া হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Water logged Primary School

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy