E-Paper

গরমে পাম্পের মাধ্যমে জল ‘চুরি’ ঠেকাতে বাধা লোকবলের অভাব

কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর ছোট পাম্পে করে জল চুরির অভিযোগ পুরসভায় আসে। অতীতে এরকম অভিযোগ পেয়ে পুর জল সরবরাহ দফতরের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই ধরনের ছোট পাম্প বাজেয়াপ্ত করেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫৫
রাস্তার কলে ছোট পাম্প সংযোগ করে বহুতলে জল ‘চুরি’ করার প্রবণতা বাড়ছে।

রাস্তার কলে ছোট পাম্প সংযোগ করে বহুতলে জল ‘চুরি’ করার প্রবণতা বাড়ছে। — প্রতীকী চিত্র।

গরম পড়তেই শহরে চাহিদা বাড়ে পরিস্রুত পানীয় জলের। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে রাস্তার কলে ছোট পাম্প সংযোগ করে বহুতলে জল ‘চুরি’ করার প্রবণতা। কিন্তু জল সরবরাহ দফতরের পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে এই ছোট পাম্প শনাক্ত করে জল চুরি ধরাটাই এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর ছোট পাম্পে করে
জল চুরির অভিযোগ পুরসভায় আসে। অতীতে এরকম অভিযোগ পেয়ে পুর জল সরবরাহ দফতরের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই ধরনের ছোট পাম্প বাজেয়াপ্ত করেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনও কঠোর আইন প্রণয়ন হয়নি। গত বছর ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে পাম্পে করে জল চুরির বিষয়ে এক নাগরিক অভিযোগ করলে মেয়র ফিরহাদ হাকিম দফতরকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের সংযুক্ত এলাকা অর্থাৎ বাঁশদ্রোণী, টালিগঞ্জ, রানিকুঠি, গড়ফা ইত্যাদি এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত পরিস্রুত জল পৌঁছয়নি। ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা এখনও মাটির নীচের গভীর নলকূপের উপরে নির্ভরশীল। প্রবল গরমে অনেককে আবার জল কিনেও খেতে হয়। এরই মধ্যে ওই সমস্ত এলাকায় রাস্তার কলে ছোট পাম্প সংযোগ করে বহুতলের উপরে জল তুলে নেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, ‘‘কেউ অভিযোগ করলে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ছোট পাম্প বাজেয়াপ্ত করে আনি।
নচেৎ পুরসভার যা লোকবল, তাতে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছোট পাম্প শনাক্ত করার মতো পরিকাঠামো নেই।’’

ওই দফতর সূত্রের খবর, শহরের কোথায় পাইপ ফুটো হয়ে জল বেরোচ্ছে বা পাম্প ব্যবহার
করে জল ‘চুরি’ হচ্ছে— তা নিয়ে প্রাথমিক স্তরে নজরদারির দায়িত্ব রয়েছে বিভাগীয় সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের কাঁধে। কিন্তু কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ বিভাগের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের অনেক পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। যেমন, ওই বিভাগের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পদে ৬৩ জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪০ জন। মেকানিক্যাল পদে ১২৭ জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা, কিন্তু আছেন ১০১ জন। ইলেকট্রিক্যাল পদে ৬৩ জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের বদলে আছেন মাত্র ৫২ জন। পুর জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ১৪৪টি ওয়ার্ডে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য যে পদ অনুমোদিত রয়েছে, সেটুকুই যথেষ্ট নয়। বাস্তবে অনেক পদ ফাঁকা আছে। ফলে পানীয় জলের পাইপে কোথায় ফুটো রয়েছে, পাম্পের মাধ্যমে জল চুরি হচ্ছে— এই সব বিষয়ে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদেরই অবহিত থাকার কথা। কিন্তু ওই পদে লোকসংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় সমস্যা বাড়ছে। পুরসভার পার্সোনেল দফতর সূত্রের খবর, ১২৫টি শূন্য সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদ পূরণে মাস চারেক আগে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই নিয়োগ হয়নি।

পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের বহু পদ
ফাঁকা থাকায় কেবল জল সরবরাহ বিভাগেই নয়, বিভিন্ন বিভাগে সমস্যা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Water crisis KMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy