Advertisement
E-Paper

‘ইন্ডিয়া’ জিতলে সিপিএমের সমর্থনে কি কংগ্রেস-তৃণমূল সরকার? পাঠচক্রে প্রশ্নবাণ, বিপাকে আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব

রবিবার জেলায় জেলায় সিপিএমের ‘ইন্ডিয়া’-ক্লাসে যে যে প্রশ্ন উঠে এল, তাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বিড়ম্বনা বাড়ল বলেই মনে করছেন অনেকে। বিবিধ প্রশ্নে কার্যত বিপন্ন লেগেছে পাঠচক্রের শিক্ষকদের।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ০০:১৪
An image of Mohammed Salim and Sitaram Yechury

(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম এবং সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

কর্মীদের ‘ইন্ডিয়া’ বোঝাতে রবিবার রাজ্য জুড়ে পাঠচক্র বসিয়েছিল সিপিএম। যতটা না উদ্দেশ্য ছিল সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রেক্ষিত বোঝানো, তার চেয়েও বেশি ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি নিয়ে সিপিএমের নিচুতলার যে ক্ষোভের উদ্গীরণ, তাকে সামাল দেওয়া। কিন্তু রবিবার রাজ্যের জেলায় জেলায় সিপিএমের এই ক্লাসে যে যে প্রশ্ন উঠে এল, তাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বিড়ম্বনা বাড়ল বই কমল না বলেই মনে করছেন দলের অনেকে। বিবিধ প্রশ্নে দলের নেতৃত্বকে বিদ্ধ করলেন সিপিএমের সাধারণ সদস্যরা। শুধু তা-ই নয়, সিপিএম সূত্রে খবর, যাঁরা সেই পাঠচক্রে উপস্থাপক ছিলেন, বহু জায়গায় তাঁরা শুরুর আগেই ‘হাত তুলে’ দেন। বলে দেন, ‘সব প্রশ্নের উত্তর নেই । অনেকটাই ধোঁয়াশা।’

হাওড়া, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রকমারি প্রশ্ন তুলছেন সিপিএমের শাখাস্তরের কর্মীরা। হুগলির একটি জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে,তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে কি না তাই নিয়ে‌। যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে দেওয়ালে কী লেখা হবে? তৃণমূলের প্রার্থী ‘ইন্ডিয়া’র সমর্থিত, আবার তার বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট প্রার্থীও ‘ইন্ডিয়া’ সমর্থিত? না কি বাংলায় বামেদের প্রার্থীর প্রচারে ‘ইন্ডিয়া’ লেখাই হবে না?

নাদিয়ার একটি জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা হবে কি না তা রাজ্য কমিটি নিশ্চিত বলতে পারবে? যদি কংগ্রেস হাইকমান্ড প্রদেশ কংগ্রেসকে সেই ‘ম্যানডেট’ দেয়, তা হলে কী হবে? সে ক্ষেত্রে বামেদের কি এখনই একা লড়ার কথা ভাবা উচিত নয়? সেই সঙ্গে অনেকে এ-ও বলেছেন, বাস্তবে একা লড়ার সেই ‘মাজার জোর’ দলের নেই, এটাই বাস্তব।

প্রসঙ্গত, বাংলায় তীব্র মমতা বিরোধী হিসাবে পরিচিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী রবিবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পুকুর এবং নদীর মধ্যে ফারাক আছে। আমার কাছে বাংলা হল পুকুর। আর ভারত হল নদী। আমি যেটা বলতে চাই, সেটাই বলি। পিছন থেকে কথা বলি না।” শুধু তাই নয়, যে অধীর বেঙ্গালুরু বৈঠকের পরেও বলেছিলেন, “বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে না,” সেই তিনিই রবিবার কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ভবিষ্যৎ সমীকরণের প্রশ্নে বলেছেন, “রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প।” যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

মূলত মমতার পাশে ইয়েচুরির ছবিই নিচুতলার সিপিএমকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সিপিএম সূত্রে খবর, রবিবারের পাঠচক্রে এই কথা উঠেছে যে, ‘ইয়েচুরি বলছেন, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে না। অথচ মমতার পাশে তাঁর উপস্থিতিই নিচুতলার পার্টি কর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে। উনি (ইয়েচুরি) কেন পঞ্চায়েত ভোটে মার খাওয়া বা খুন হওয়া কর্মীদের বাড়িতে যাচ্ছেন না? বাংলা থেকে তো সুসময়ে রাজ্যসভায় গিয়েছেন। এখন আসছেন না কেন?’

সিপিএম কর্মীদের এ-ও প্রশ্ন, বিজেপি বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনতে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হয়েছে। সেই ‘ইন্ডিয়া’ আবার বাংলা, কেরলে নিজেদের মধ্যে লড়াই করবে? এটা কী তত্ত্ব?

কী হলে কী হতে পারে সে সব নানা ধরনের প্রশ্নই উঠেছে সিপিএমের পাঠচক্রে। এক জায়গায় এই প্রশ্নও তোলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’ যদি জেতে, তৃণমূল সেই সরকারে অন্যতম বড় শরিক হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে ক্ষেত্রে সিপিএম কি সমর্থন করবে সেই সরকারকে?

বেঙ্গালুরু বৈঠকের প্রস্তাবে লেখা রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দল শাসিত রাজ্যগুলিতে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছে। রবিবার প্রশ্ন উঠেছে, তার মানে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে এজেন্সি রাজনৈতিক কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেই কি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করে?

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতার কথায়, “ক্ষোভ প্রশমনের জন্য পাঠচক্রের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিবিধ প্রশ্নে তার উল্টোটাই হল। এখন কথা, শব্দের মারপ্যাঁচ দিয়ে হয়তো জোড়াতাপ্পি দেওয়া হবে, কিন্তু মৌলিক প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য।”

Sitaram Yechury Mohammed Salim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy