‘সবার উপরে ধর্ম সত্য’ শীর্ষক ‘দেশ বিতর্ক ২০১৯’-এর মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) স্বরূপপ্রসাদ ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পল, শমীক ভট্টাচার্য, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সঞ্চালক কুণাল সরকার, সুবোধ সরকার, অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিম এবং অভিজিৎ চৌধুরী। সোমবার বিড়লা সভাগারে। নিজস্ব চিত্র
ইদ আর শ্রাবণে মহাদেবের শেষ স্নানের দিন মিলে গিয়েছিল এক সোমবারে! এমন দিনে ধর্মের মহিমা নিয়ে কথা তো উঠবেই। ২০১৯-এর দেশ-বিতর্কের আসর তবু ধর্ম ছাপিয়ে দেশের ইতিহাস বা সমসময়ের রাজনীতির চৌহদ্দিতেই ঢুকে পড়ল।
বিড়লা সভাগারে ‘সবার উপরে ধর্ম সত্য’ শীর্ষক বাগ্যুদ্ধে যাঁরা পক্ষে বলতে উঠেছিলেন, সেই চার জনেই বিজেপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, স্বরূপপ্রসাদ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্য বা ফ্যাশন ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রা পালেরা ঘুরেফিরে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আদর্শেই তাঁদের বিশ্বাস স্থিত রেখেছেন। কিন্তু ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস’-এর লব্জই ফের দেশ জুড়ে গণপ্রহারে মৃত্যু এবং সংখ্যালঘুর বিপন্নতার কিস্সা উস্কে দিল।
সকলেই ‘যত মত তত পথ’-এর কথা বললেও কাজের বেলায় কী করে থাকেন? এই প্রশ্নেই প্রধানত প্রতিপক্ষকে বিঁধেছেন সভার মতের বিরুদ্ধ শিবিরভুক্তেরা। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, গাঁধী— সবার আদর্শই বেদ-উপনিষদ থেকে বৈষ্ণব দর্শনের চিন্তা-পরম্পরায় নিহিত বলে স্বরূপবাবু যা বললেন, তার জবাবে সংসদের বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘এই মনীষীকুলের ভ্রাতৃত্বের আদর্শ কতটা নিতে পেরেছেন?’’ অধীরবাবুর পক্ষে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী তাঁর রোগীদের মধ্যে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং এ রাজ্যের কাঁকিনাড়ার এক রোগিণীর বিপন্নতার কথা শোনালেন। বললেন, ‘‘সীমান্তের দু’পারেই বিভাজনের কাজটাই ধর্ম করে আসছে।’’ মার্ক্সের চেনা উদ্ধৃতি ছুঁয়ে ‘ধর্ম নয়, ক্ষুধাই সব থেকে বড় সত্য’— এই মতে স্থিত হলেন তিনি।
সিপিএমের পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম, অধুনা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধ সরকারও সভার মতের বিপক্ষে পাঁচমিশেলি-বাহিনীতে। গোলওয়ালকরের উদ্ধৃতি তুলে সঙ্ঘের ‘ভারতীয়ত্ব’ শুধুই হিন্দুসর্বস্ব বলে তোগ দাগলেন সুবোধবাবু। তিনি ধর্মের নামে ঝাড়খণ্ডের যুবককে বেঁধে মারার প্রসঙ্গ তুলতেই অবশ্য লকেটের কটাক্ষ, ‘‘আপনিই তো নন্দীগ্রামের গণহত্যাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন!’’ সেলিম বললেন, ‘‘আফগান তালিবান এবং আজকের ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের স্বর অবিকল মিলে যাচ্ছে!’’ তাঁর আফসোস, ধর্মই সত্য বলতে গিয়ে গাঁধীর ‘সত্যই ধর্ম’-এর আদর্শ ভুলে যাচ্ছে
ভারত। শমীক প্রতিবাদ করলেন, ‘‘ধর্ম নয়, পাশ্চাত্য যাকে রিলিজিয়ন বা সংগঠিত ধর্মীয় গোষ্ঠী বলে সেটাই নষ্টের গোড়া!’’
সঞ্চালক চিকিৎসক কুণাল সরকার মনে করিয়ে দিলেন, মানুষের তিন লক্ষ বছরের অস্তিত্বে সংগঠিত ধর্মের সময়কাল বড়জোর ১০ হাজার বছরের! ইদানীং সংসদীয় রাজনীতি ধর্মের নানা স্লোগানে মথিত হলেও এ বিতর্কের তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় অবশ্য ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব ততটা গ্রাহ্য হল না। ধর্ম নয়, মানুষই শেষ কথা বলে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy