ফ্রেজারগঞ্জে উপরে গেছে গাছ।—ছবি পিটিআই
তারা যে পারে, কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় নেমে তা দেখিয়ে দিয়েছে ওড়িশা। এ বার পারল পশ্চিমবঙ্গও।
এক দশক আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লার ধাক্কায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল জনজীবন। ঘরবাড়ি, চাষ-আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়, প্রাণহানিও হয়েছিল বিস্তর। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এ বার আয়লার থেকে জোরে আছড়ে পড়ে বাড়িঘর ভাঙলেও প্রাণহানি কম। ঠিক যে-ভাবে গত কয়েক বার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এলেও ওড়িশায় প্রাণহানি অনেক কম হয়েছিল।
আয়লায় পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ১৫০ জনের মৃত্যু হয়। বুলবুলের হামলায় মারা গিয়েছেন ১১ জন। এ বার প্রাণহানি যে যথাসম্ভব কমানো গিয়েছে, তার জন্য ঘূর্ণিঝড়ের নির্দিষ্ট পূর্বাভাস এবং বিপর্যয় মোকাবিলার সার্বিক পরিকল্পনা ও তৎপরতাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছে সব শিবির।
সংবাদ সংস্থার খবর, বুলবুলের পরে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণকাজ খতিয়ে দেখতে সোমবার দিল্লিতে ক্যাবিনেট সচিবালয়ে বৈঠকে বসে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি। ভিডিয়ো-সম্মেলন মারফত তাতে যোগ দেন দুই রাজ্যের কর্তারাও। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায়, পশ্চিমবঙ্গেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি। ওড়িশায় প্রাণহানি হয়নি, দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসেরও প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
আয়লার পরেই কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে ‘সুসংহত উপকূল পরিচালন ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প চালু হয়েছিল। তার বেশির ভাগ খরচ বিশ্ব ব্যাঙ্কই জুগিয়েছে। পরে বিশ্ব ব্যাঙ্কের বরাদ্দে চালু হয় ‘ন্যাশনাল সাইক্লোন রিস্ক মিটিগেশন প্রোগ্রাম’ (এনসিআরএমপি)। সেই সব প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। এনসিআরএমপি-তে ১৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে উপকূলীয় জেলাগুলিতে। সেখানে এ বার বহু মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়।
সুসংহত উপকূল পরিচালন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পেও উপকূল এলাকায় বিভিন্ন পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে, লাগানো হয়েছে ম্যানগ্রোভ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বিশেষজ্ঞ গুপিনাথ ভাণ্ডারীর মতে, সময়মতো পূর্বাভাস পেয়ে কাঁচাবাড়ি থেকে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরানোয় প্রাণহানি এত কম। ঝড়ের দাপট কমানোর ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে কাজ করে ম্যানগ্রোভ। যেখানে ম্যানগ্রোভ কম, সেই সব এলাকাতেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি।
দিল্লির মৌসম ভবনের খবর, এক দশকে তাদের প্রযুক্তি এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তার ফলেই ঘূর্ণিঝড়ে কোথায়, কখন কত গতিতে আছড়ে পড়বে, তার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy