অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় পিলিনের দাপটে ২০১৩ সালে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল ওড়িশার জনজীবন। তার পরের বছরই আর এক অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ তছনছ করে দিয়েছিল বিশাখাপত্তনমকে। ঘূর্ণিঝড়ের দাপট বোঝাতে সাম্প্রতিক কালের এই দু’টি উদাহরণই যথেষ্ট।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরেই এমন ঘন ঘন হানা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। আগামী দিনে এর দাপট আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। আবহবিজ্ঞানীরাও এ কথা মেনে নিচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সব আগন্তুকদের হানাদারিতে নজর রাখতেই নতুন ‘চোখ’ লাগাচ্ছে মৌসম ভবন। বর্তমান নজরদারের চেয়ে নজর যার ঢের বেশি তীক্ষ্ণ। মাঝসাগরে বিমান নিখোঁজ হওয়ার মতো কোনও বিপত্তি ঘটলে উদ্ধার-তল্লাশির কাজেও যা আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজে আসবে।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ১০ মিনিটে জিএসএলভি-এফও৫ রকেটে চেপে রওনা দেবে সেই ‘চোখ’। যার সরকারি নাম হল ইনস্যাট-৩ডিআর। উপগ্রহ-আবহবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী বীরেন্দ্র সিংহ বলছেন, ‘‘এই নতুন কৃত্রিম উপগ্রহটির মাধ্যমে সাগরের উষ্ণতার উপরে অনেক নিখুঁত ভাবে নজরদারি চালানো সম্ভব হবে। সাগরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশি সাহায্য করবে।’’
কী ভাবে?
মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, সাগরের জলের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলেই তা ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে। তাপমাত্রার উপরে নির্ভর করে তার শক্তি এবং সে কোন পথে এগোবে, কোথায় কতটা বাঁক নিতে পারে, এর সবটাই নির্ভর করে জলের তাপমাত্রার উপরে। এই পূর্বাভাস দিতে গিয়ে সাগরের মধ্যেও একটি এলাকা থেকে অন্য এলাকার তাপমাত্রার ফারাক হিসেব করা জরুরি। এই পরিমাণ ও হিসেব যত নিখুঁত হবে, ততই নির্দিষ্ট হবে পূর্বাভাস। তার উপরে নির্ভর করেই বিপর্যয় মোকাবিলার পদক্ষেপ করা হয়। সাগরের এই পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য উপগ্রহ কতটা জরুরি তা বলতে গিয়ে মৌসম ভবনের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সাগরে তো আর আবহাওয়া কেন্দ্র গড়া সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে উপগ্রহই সব থেকে
বড় হাতিয়ার।’’
আবহবিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন, শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, সাগরের উষ্ণতার উপরে নিম্নচাপ, বর্ষার মতিগতিও নির্ভর করে। দেশের কৃষি এবং অর্থনীতির উপরে বর্ষা এবং বর্ষাকালের নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত অনেক প্রভাব ফেলে। ফলে ভবিষ্যতে দেশে বর্ষা বা নিম্নচাপের পূর্বাভাস দিতেও এই উপগ্রহ কাজে আসবে।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, এই নতুন চোখের ফলে দেশের পরিমণ্ডলের উপরে সামগ্রিক নজরদারিও আরও বাড়বে। এখন ইনস্যাট-৩ডি দিয়ে প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর ছবি তোলা হয়। ইনস্যাট-৩ডিআর কাজ শুরু করার পর প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর উপগ্রহ-চিত্র
পাবেন আবহবিজ্ঞানীরা।
রাতের তাপমাত্রা ও কুয়াশার পূর্বাভাসেও এই উপগ্রহ কাজে লাগবে। এই সব কিছুর পাশাপাশি সাগরে কোনও বিপর্যয় ঘটলে তার তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানেও তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ। মৌসম ভবন জানা়চ্ছে, তল্লাশি অভিযানের ওই তথ্য অবশ্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এবং সেনাবাহিনীর কাছে সরাসরি পৌঁছবে।
ইসরো জানিয়েছে, জ্বালানি-সহ ইনস্যাট-৩ডিআর উপগ্রহটির ওজন ২ হাজার ২১১ কিলোগ্রাম। রকেটের জ্বালানি ফুরনোর পর নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছতে উপগ্রহের নিজস্ব জ্বালানি প্রয়োজন পড়বে। তার পর উপগ্রহটির শক্তি জোগাবে তার শরীরে লাগানো সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।