রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে প্রধানশিক্ষক এবং শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করে দিল সরকার। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ দিন স্কুলগুলিতে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি ওবিসি নিয়ে রাজ্যের অবস্থান বিধানসভায় স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশ মেনে তৈরি করা হয়েছে ওবিসিদের নতুন তালিকা। রাজ্যে কোন কোন জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, সেই তালিকা কিছু দিন আগে প্রকাশও করে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন। সেই তালিকার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রধানশিক্ষক এবং শিক্ষকের একাধিক শূন্যপদে নিয়োগের কথা পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বলা হয়েছে। শীঘ্রই তারা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে।
রাজ্যের ১৪৯টি সরকারি স্কুলে ১২১০টি শূন্যপদে নিয়োগ দীর্ঘ দিন ধরে থমকে ওবিসি জটের কারণে। অনেক স্কুলে প্রধানশিক্ষকই নেই। বিভিন্ন বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদও অনেক স্কুলে ফাঁকা পড়ে আছে। সূত্রের খবর, আপাতত ৪১টি স্কুলে ৩৬ জন প্রধানশিক্ষক এবং দু’জন প্রধানশিক্ষিকার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বাকি পদগুলিতেও ধীরে ধীরে নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু হবে। ওবিসি জটের কারণে সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির প্রক্রিয়াও অনেক দিন ধরে আটকে রয়েছে। নতুন তালিকা ধরে তা-ও চালু করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে দ্রুত নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজ্য সরকারের নতুন তালিকায় ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে। আরও অনগ্রসর বা ওবিসি-এ তালিকায় ৪৯টি এবং অনগ্রসর বা ওবিসি-বি তালিকায় ৯১টি জনগোষ্ঠীর নাম রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন জানায়, দেবাঙ্গ এবং ভারভূজা সম্প্রদায়কে নিয়ে পুনরায় সমীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের ওবিসি তালিকায় রাখা হবে কি না, সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে তৈরি সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। ওই সব সার্টিফিকেট ভবিষ্যতে কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। হাই কোর্টের নির্দেশের পর জেলাশাসকদের নেতৃত্বে রাজ্যের সব ক’টি জেলায় সমীক্ষা হয়। অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনের সল্টলেকের দফতরে তার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চলেছে দীর্ঘ দিন। তার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন সংশোধিত তালিকায় সিলমোহর দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশনের সদস্য সামিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে আইন মেনেই সংশোধিত ওবিসি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী দিনেও আবেদনের সুযোগ থাকবে। তালিকা নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকলে কমিশনে অভিযোগ জানানো যাবে।’’