E-Paper

শাহের সুরে বিজেপি চায় ’২৪ পার করতে

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে যখন তৃণমূল সরব, তখন পাল্টা খতিয়ান দিয়ে তা খণ্ডনে নেমেছে বিজেপি। তার সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও জুড়ে দিতে চাইছেন বিজেপির নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১
bjp

—প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটে শাহ-সুরেই তৃণমূল বধের ছক কষে ফেলতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে তাদের দাবি, যে কোনও লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করা সম্ভব।

ধর্মতলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভামঞ্চ থেকেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ যখন বাংলায় ২২টি আসন জয়ের কথা বলেছিলেন, তখনও অনেকে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে সেই আসন (বাস্তবে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল) পেয়েছিলাম।’’ বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছিলেন, ‘‘সভা থেকে শাহ লোকসভা নির্বাচনের শঙ্খনাদ দেবেন।’’

আগে ৩৫টি আসনের কথা বললেও ধর্মতলায় কোনও সংখ্যার উল্লেখ না করে শাহ বলেছেন, ‘‘বাংলা থেকে বিজেপিকে এত আসন জেতান, যে শপথ নেওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী বলতে পারেন, বাংলার জন্যই ফের প্রধানমন্ত্রী হলাম।’’ কিন্তু কোন সূত্রে তা সম্ভব? সেই সুরও বেঁধে দিয়েছেন শাহ-ই। আর সেই সূত্র ধরে এগিয়ে লোকসভা নির্বাচন উতরে দিতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে যখন তৃণমূল সরব, তখন পাল্টা খতিয়ান দিয়ে তা খণ্ডনে নেমেছে বিজেপি। তার সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও জুড়ে দিতে চাইছেন বিজেপির নেতারা। শাহ বলে গিয়েছেন, ইউপিএ ১০ বছরে বাংলার জন্য যা বরাদ্দ করেছিল, মোদী সরকার ন’বছরে তার সাড়ে তিন গুণের বেশি বরাদ্দ করেছে। ওই মঞ্চেই রাজ্য থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার থেকে সাংসদ খগেন মুর্মু-সহ দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা আয়ুষ্মান ভারত, কিসান সম্মাননিধির মত প্রকল্পগুলিকে বাংলায় চালু করতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

মানুষের বঞ্চনার বিবরণ জানার জন্য সভাস্থলে ড্রপ-বাক্স রাখা ছিল, যার পোশাকি নাম ছিল ‘বঞ্চনা ভান্ডার’। বিজেপি নেতাদের দাবি, প্রায় ৫০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। তাঁরা সেটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘শাহ আমাদের লোকসভার লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়ে গিয়েছেন। এক দিকে তৃণমূলের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির কথা আমরা মানুষকে বলব। সেই সঙ্গে জানাব, ইউপিএ আমলের থেকে অনেক বেশি বরাদ্দ হয়েছে মোদী-জমানায়। তৃণমূলের চুরির জন্য সাধারণ মানুষ তা থেকে বঞ্চিত।’’ উন্নয়নের অর্থের সঙ্গে দুর্নীতিকে জুড়ে দিতে বিধানসভায় লাগাতার আন্দোলন করছেন শুভেন্দু অধিকারী।

কিছু বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করলেও শাহের বক্তৃতায় ঝাঁঝ অনেকেই খুঁজে পাননি। বিরোধী দলনেতা থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় নেতারা প্রতিনিয়ত যে ‘ভাইপো’কে নিশানা করেন, তাঁর নামও মেরেকেটে মাত্র এক বারই শোনা গিয়েছে শাহের মুখে। তার উপরে ইডি, সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে অন্য বিরোধীদের মতো প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অন্দরেও। সে সব সামলে বিজেপি কি আদৌ দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপাতে পারবে? সুকান্তের জবাব, ‘‘দুর্নীতির মাথাদের গ্রেফতার নিয়ে বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা আছে, তা আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আদালতের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আদালত যদি মনে করে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, যদি গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়, তা হলে গ্রেফতার হবে।’’

বিজেপি শিবিরের একাংশের দাবি, দুর্নীতির তদন্তে ডিসেম্বরেই ‘বড় খবর’ আসতে পারে। যে ইঙ্গিত সম্প্রতি শুভেন্দুর কথাতেও মিলেছিল। তার পরেই ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চে ব্রিগেডে বড় মাপের সমাবেশে তৃণমূল-বিরোধী প্রচারকে তুঙ্গে নিতে চান তাঁরা। সেই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চাইছে রাজ্য বিজেপি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP TMC West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy