Advertisement
E-Paper

শিশু পড়ুয়াদের শাস্তি রুখছে কমিশনের মমতা

মা মরা ছেলে। যত্ন করার কেউ নেই। দুষ্টুমি করে স্কুলে বকুনি খেত রোজ। এক দিন সেই ছেলে শিক্ষিকার চেয়ারে চুইংগাম লাগিয়ে দিল। বেধে গেল তুলকালাম কাণ্ড। অভিযোগ, রেগে গিয়ে তখনই তার দিকে ডাস্টার ছুড়ে মারলেন শিক্ষিকা। মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগল তার।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৪১

মা মরা ছেলে। যত্ন করার কেউ নেই। দুষ্টুমি করে স্কুলে বকুনি খেত রোজ। এক দিন সেই ছেলে শিক্ষিকার চেয়ারে চুইংগাম লাগিয়ে দিল। বেধে গেল তুলকালাম কাণ্ড। অভিযোগ, রেগে গিয়ে তখনই তার দিকে ডাস্টার ছুড়ে মারলেন শিক্ষিকা। মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগল তার।

কিছু দিন পরে তার থেকেও বড় আঘাত এল স্কুলের কাছ থেকে। ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিচার পর্বের শেষে ছেলেটিকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট বা টিসি ধরিয়ে দেয় তারাতলা রোডের সেই স্কুল।

তবে রাজ্য শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশন বা আয়োগের হস্তক্ষেপে ১৩ বছরের ছাত্রটিকে ফিরিয়ে নিয়েছে তার স্কুল। বাচ্চাদের মন বুঝে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করলে তারা যে কতটা বদলে যেতে পারে, স্কুল সেটাও অনুভব করতে পেরেছে। ছেলেটি কাউন্সেলিংয়ের পরেই যথেষ্ট ভাল ফল করে নতুন ক্লাসে উঠেছে। তার বাবা মিষ্টি নিয়ে কমিশনে গিয়ে জানিয়েছেন, ছেলে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ‘‘মনটাই আসল। তাকে মেলতে দিলে, খুলতে দিলেই সেটা শান্ত হবে। নেতিবাচকতা কেটে যাবে। শিক্ষক ও পড়ুয়ার মধ্যে গড়ে উঠবে অনাবিল সম্পর্ক,’’ বলেন কমিশনের কাউন্সেলর সুরঞ্জনা সান্যাল।

স্কুলে ফিরতে পারাটা অবশ্য খুব সহজ হয়নি ওই ছাত্রের। টানাপড়েন চলে দীর্ঘ তিন মাস। ছাত্রছাত্রীদের মন বোঝা বা তাদের সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফেও যে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে, স্কুল তা মেনে নিয়েছে। স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানান, কমিশনের পরামর্শে কাউন্সেলিং হয়েছে আরও ৪০টি শিশুর। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাউন্সেলিংও শুরু হচ্ছে শীঘ্রই।

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, স্কুলের শৃঙ্খলা রক্ষার নামে কথায় কথায় বাচ্চাদের টিসি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে খুদে পড়ুয়াদের মন ও মতির পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের ভালটাকে বার করে আনা যায়, সেই চেষ্টা বিশেষ নেই। ‘‘অসহিষ্ণুতা বেড়েছে। ধৈর্য কমেছে। দুষ্টু ছেলেমেয়েকে ভাল করার চ্যালেঞ্জ নিতে না-পারলে স্কুলের কৃতিত্ব কোথায়,’’ প্রশ্ন কমিশন-প্রধানের।

কয়েক মাস ধরে কলকাতা ও আশপাশের বেশ কিছু স্কুল পরিদর্শন করেছেন কমিশনের সদস্যেরা। তাঁরা দেখেছেন, সাধারণ স্কুল তো বটেই, অনেক নামী স্কুলেও প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নেই, স্পেশ্যাল এডুকেটর নেই। কমিশন স্কুলে গেলে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে কাউন্সেলর হিসেবে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকারাও নানা কারণে প্রবল চাপে থাকেন। তাঁদের ‘মোটিভেট’ করা বা পড়ুয়াদের মনের শুশ্রূষায় তাঁদের আগ্রহী করে তোলার জন্য আলাদা কোনও কর্মসূচি নেই। সহজ রাস্তা হিসেবে বাচ্চার হাতে সটান টিসি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে,’’ বললেন কমিশনের কার্যনির্বাহী সচিব সুপর্ণা দাস আহমেদ।

শিলিগুড়ি থেকে মুকেশ পোদ্দার নামে এক অভিভাবক কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর ১৩ বছরের ছেলে পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। তার হাতে টিসি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলে যে অন্যায় করেছিল, তা স্বীকার করে নিয়েই মুকেশবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ও এটা করল কেন, কী ভাবে ওকে শোধরানো যায়, সেই দায়িত্ব কি স্কুলেরও নেওয়া উচিত নয়? সবটাই কি বাবা-মায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে ওরা?’’

State Commission of Protection of Child Rights Punishment Children Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy