Advertisement
E-Paper

তিন ঘণ্টায় উধাও দশ কেজি বোরোলি

পরপর সাজানো হরেক মেনু। প্রায় সবগুলিরই অনুসঙ্গ বোরোলি। বোরোলি ফ্রাই, বোরোলি ঝাল, বোরোলি টক, বোরোলি পোস্ত, দই বোরোলি, বোরোলি কড়াইশুঁটি থেকে তেল বোরোলি, বোরোলি কালিয়া। কেউ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পছন্দের মেনু বাছাই করে সেখানেই খাবারের অর্ডার দিলেন। কেউ আবার প্যাকেটে করে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। প্রথম দিন ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে এ ভাবেই উধাও হয়ে গেল অন্তত ১০ কেজি বোরোলি।

বোরোলি মাছের এমনই নানা পদ ছিল উৎসবে। —নিজস্ব চিত্র।

বোরোলি মাছের এমনই নানা পদ ছিল উৎসবে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০২:৫৫
Share
Save

পরপর সাজানো হরেক মেনু। প্রায় সবগুলিরই অনুসঙ্গ বোরোলি। বোরোলি ফ্রাই, বোরোলি ঝাল, বোরোলি টক, বোরোলি পোস্ত, দই বোরোলি, বোরোলি কড়াইশুঁটি থেকে তেল বোরোলি, বোরোলি কালিয়া। কেউ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পছন্দের মেনু বাছাই করে সেখানেই খাবারের অর্ডার দিলেন। কেউ আবার প্যাকেটে করে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। প্রথম দিন ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে এ ভাবেই উধাও হয়ে গেল অন্তত ১০ কেজি বোরোলি।

৭৫ বোতল বোরোলি মাছের আচারও দুপুরের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। ফলে দ্বিতীয় দফায় বিক্রির জন্য নতুন করে ২০ কেজি বোরোলি আনা হয়। শুরু হয় আচার তৈরির উদ্যোগ। তোপসে, পাবদা, চিতল মাছের নানা মেনুর চাহিদাও ছিল তুঙ্গে। সব মিলিয়ে উৎসবের আঙিনায় ছিল হরেক স্বাদের প্রায় ৩৯টি মেনু। তাই রসনা তৃপ্তিতে ভিড় করেন উৎসাহী মৎস্যপ্রেমী ও ভোজন রসিকরা। সৌজন্যে জেলা মৎস্য দফতর।

কোচবিহারে আয়োজিত দুই দিনের প্রথম বোরোলি উৎসবের প্রথম দিনের ছবিটা ছিল এ রকমই। উত্তরবঙ্গের অলিখিত মাছের রাজা বলে পরিচিত বোরোলি মাছ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই ওই উৎসবের আয়োজন। শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। বোরোলির মেনু চেখে নেতা, মন্ত্রী থেকে আমআদমি, এমনকী উদ্যোক্তারাও উচ্ছ্বসিত।

কোচবিহার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আজ শনিবার পর্যন্ত উৎসব চলবে। চন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বোরোলি মাছ আগেও একবার খেয়েছিলাম। এ দিনও খেয়েছি। সত্যিই দারুণ স্বাদের। অথচ এমন নদীয়ালি মাছ নানা কারণে ক্রমশ কমে যাচ্ছে। অথচ বোরোলির চাহিদা মারাত্মক। ওই মাছের বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর মত নানা পরিকল্পনা মাথায় রেখেই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পর্যটকদের কাছেও ওই মাছের খ্যাতি বেশী করে প্রচার করা হবে। উৎসবে দারুণ সাড়াও মিলেছে।” রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বোরোলির খ্যাতি বহুদিনের। মশারি জাল ব্যবহার-সহ নানা কারণে তোর্সার রুপোলি রাজার অস্তিত্ব বিপন্ন। বোরোলি বাঁচলে পর্যটনেও প্রসার হবে।”

দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, বোরোলির এমন খ্যাতি রাজাদের আমল থেকেই। কোচবিহারের মহারানি ইন্দিরাদেবী মুম্বই কিংবা কলকাতায় থাকলে তাঁর জন্য বোরোলি মাছ প্যাকেট করে বিমানে পাঠানো হত। একসময় জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে উত্তরবঙ্গে এলেই বেরোলির খোঁজ করতেন। তাঁর মেনুতেও থাকত বোরোলির হরেক পদ। গত কয়েক বছর আগে জেলার বাজারে বোরোলির ব্যাপক আমদানি হত। কিন্তু ইদানীং বোরোলির যোগান কমেছে। নদীতে সেভাবে বোরোলি না মেলায় দাম বেড়েছে অনেকটা। কেজি প্রতি এক হাজার টাকা পর্যন্ত ওই মাছের দাম ওঠানামা করছে।

কোচবিহার জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “চাহিদার তুলনায় যোগান কম বলে বোরোলি-সহ অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় নদীয়ালি মাছের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের অনেকেই দাম নিয়ে আক্ষেপ করেন। অথচ নদী দূষণ রোধ, প্রজনন ঋতুতে মাছ না ধরার মত কিছু সাবধানতা নেওয়া হলে সমস্ত নদীয়ালি মাছের ক্ষেত্রেই ওই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। তাই দু’দিনের ওই উৎসবের আয়োজন করে সচেতনতা বাড়াতে চাইছি। বোরোলির আচার ভাল বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য রকমারি মেনুর চাহিদা ছিল।”

ওই উৎসবে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, সাংসদ রেণুকা সিংহও উপস্থিত ছিলেন। উদ্যোক্তারা জানান, ৮২ প্রজাতির নদীয়ালি মাছ বাঁচাতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বোরোলি অবশ্যই বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। এদিন সকালে বোরোলি উৎসব উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও কোচবিহার শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। উৎসবে আসা এক বাসিন্দা সঞ্জয় দাস বলেন, “সর্বাধিক ১০০ টাকা খরচ করে বোরোলি কিংবা অন্য মাছের এত মেনু বাছাইয়ের সুযোগটাই তো বড় ব্যাপার। তাই আমি নিজেও ওখানে চেখে দেখেছি, বাড়ির জন্যও নিয়েছি।”

boroli fish chandranath singh north bengal renuka singh binay krishna barman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy