Advertisement
E-Paper

মিড-ডে মিলে থাবা কার, নজর রাজ্যের

কোনও কোনও স্কুলে ঢালাও চাল চুরি। কোথাও কোথাও খোলা বাজারে চাল বিক্রি। অনেক ক্ষেত্রে আবার ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য ডিম তাদের না-দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া...।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০
কাকদ্বীপ শিশু শিক্ষায়তন হাইস্কুলে শান্তশ্রী মজুমদারের তোলা ছবি।

কাকদ্বীপ শিশু শিক্ষায়তন হাইস্কুলে শান্তশ্রী মজুমদারের তোলা ছবি।

কোনও কোনও স্কুলে ঢালাও চাল চুরি। কোথাও কোথাও খোলা বাজারে চাল বিক্রি। অনেক ক্ষেত্রে আবার ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্য ডিম তাদের না-দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া...।

স্কুলপড়ুয়াদের মুখের গ্রাস নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। মিড-ডে মিল ঘিরে দুর্নীতি ধরতে এ বার তাই বিশেষ নজরদার দল তৈরি করছে স্কুলশিক্ষা দফতর। আগে থেকে কোনও খবর না-দিয়ে ওই সব নজরদার দল হঠাৎ হঠাৎ হানা দেবে বিভিন্ন স্কুলে। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কারচুপি ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে ওই দল।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই এই আচমকা পরিদর্শন শুরু হবে বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। হঠাৎ এই তৎপরতা কেন? ওই দফতরের এক কর্তা জানান, চাল চুরি, চাল বেচে দেওয়া, মিড-ডে মিলের ডিম থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করার মতো অভিযোগ আসে প্রায় রোজই। বিষয়টি নিয়ে বিধায়কেরাও অনেক সময়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিধানসভায়। এই ধরনের অভিযোগ যে আসছে, বেশ কয়েক বার তা স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। সম্প্রতি বিধানসভায় বিষয়টির উল্লেখ করেন তিনি। এই সব অভিযোগ কতটা সত্য, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তদন্তও হয়েছে। কিন্তু সুরাহা বিশেষ হয়নি বলেই রিপোর্ট আসছে। তাই এ বার স্কুলগুলিতে হঠাৎ হঠাৎ পরিদর্শন চালিয়ে এই কারচুপিতে লাগাম পরাতে চাইছে স্কুলশিক্ষা দফতর।

আরও পড়ুন: চুমকিদের নিয়েই যায়নি নিশ্চয় যান

১৯৯৫ সালের ১৫ অগস্ট দেশ জুড়ে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু হয়। ২০১০ সালে সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের আওতায় নিশ্চিত করা হয় শিক্ষার অধিকার। তখন শিশুদের স্কুলমুখী করতে মিড-ডে মিল প্রকল্পের উপরে জোর দেওয়ার তাগিদ বাড়ে। ২০১৫-র অক্টোবর থেকে খাদ্য সুরক্ষা আইনে স্কুলপড়ুয়াদের মিড-ডে মিল পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

স্কুল সম্পর্কে পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের সুষম খাদ্য দিতেই এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এ রাজ্যে দুপুরের ওই খাবার জোগানোর প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। শিক্ষামন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, অনেক জায়গায় নিয়মিত পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয় না। এমনকী কোথাও কোথাও স্কুলের ছেলেমেয়েদের রাস্তায় বসিয়েও খাওয়ানো হয়।

কয়েক বছর আগে মিড-ডে মিল খেয়ে বহু পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, পড়ুয়াদের দেওয়ার আগে দুপুরের ওই খাবার চেখে দেখতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু সেই নির্দেশও অনেক জায়গায় মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।

সম্প্রতি স্কুলগুলিকে খাওয়ার ঘর তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। মিড-ডে মিল গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা সর্বত্র যথাযথ ভাবে খাবার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের খাবারে থাবা বসানোর যে-অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনও। যে-সব শিক্ষক প্রাপ্য মিড-ডে মিল থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করেন, তাঁরা শিক্ষক পদবাচ্য নন বলে মন্তব্য করেছেন ‘অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সাহা। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ছাত্রছাত্রীদের ওই খাবার দেওয়ার বাড়তি কাজটা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে রাখাই উচিত নয়। বেশির ভাগ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাকর্মী নেই বলেই পঠনপাঠনের সঙ্গে সঙ্গে মিড-ডে মিলের দায়িত্বও নিতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ‘‘প্রতিটি স্কুলে অন্তত এক জন শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘাড় থেকে ওই খাবারের দায়িত্ব নামিয়ে দেওয়া দরকার,’’ বলছেন কার্তিকবাবু।

Mid Day Meal Corruption State Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy