E-Paper

পুনর্বাসনে উপদেষ্টা কমিটির প্রস্তাব পেশ

কোর্টের খবর, স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল অপরাজিতা ওরফে মুনমুনকে। ১৩ বছর জেলে কাটানোর পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস পান তিনি। অপরাজিতার অভিযোগ, বন্দিদশা কাটিয়ে তিনি সমাজের মূলস্রোতে ফিরলেও জীবিকাগত পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৪

—প্রতীকী চিত্র।

সংশোধানাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটি তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি কারা বিভাগের কর্তারা এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন এবং সম্ভাব্য কমিটির প্রস্তাব কারা দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই কমিটির মাথায় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সন্ন্যাসীর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সদস্য-সচিব হিসেবে কাজ করবেন কারা বিভাগের অতিরিক্ত আইজি (সদর)। অপরাজিতা বসু ওরফে মুনমুন নামে এক মহিলার দায়ের করা মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই কমিটি গঠন বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। হাই কোর্টে কারা বিভাগের দেওয়া হলফনামাতেও এই প্রস্তাব তৈরির কথা বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এত দিন কারা দফতরে চিফ প্রবেশন অফিসারের নেতৃত্বে জেলা স্তরে পুনর্বাসন সংক্রান্ত কাজকর্ম হলেও কোনও সার্বিক নজরদারি কমিটিছিল না।

কোর্টের খবর, স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল অপরাজিতা ওরফে মুনমুনকে। ১৩ বছর জেলে কাটানোর পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস পান তিনি। অপরাজিতার অভিযোগ, বন্দিদশা কাটিয়ে তিনি সমাজের মূলস্রোতে ফিরলেও জীবিকাগত পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাই বন্দিদের পুনর্বাসন নিয়ে মামলা করেছেন তিনি। অপরাজিতার বক্তব্য, “পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। পেশা হিসেবে এমন কিছু পথ দেখানো হচ্ছে যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আদতে পুনর্বাসনের তেমন কোনও পরিকল্পনাই নেই।” তাঁর অভিযোগ, একজন মহিলা বন্দিকে হয় তো বলা হচ্ছে যে তিনি চাইলে অটো বা টোটো চালাতে পারেন। কিন্তু সেই মহিলার পক্ষে সেই কাজ সম্ভব কি না, তা বিচার করা হচ্ছে না। অপরাজিতাকেও তাঁর যোগ্য কাজ খুঁজে দেওয়া হয়নিবলে অভিযোগ।

কারা দফতর সূত্রের বক্তব্য, পুনর্বাসনের নির্দিষ্ট প্রকল্প আছে। প্রতি জেলায় এক বা একাধিক আধিকারিক (প্রবেশন কাম আফটার কেয়ার অফিসার) এ ব্যাপারে কাজ করেন। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির যোগ্যতা, ক্ষমতা ইত্যাদি দেখে সেই অনুযায়ী কাজের বন্দোবস্ত করা হয়। সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যাতে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করতে পারে, বহু ক্ষেত্রে তার দিকেই জোর দেওয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে যে ফাঁক থাকছে, তা-ও মেনে নিচ্ছেন কারা দফতরের অফিসারদের একাংশ। এক কারা-কর্তার কথায়, ‘‘মুক্তি পাওয়ার পর কেউ হয় তো মাসিক ৩০ হাজার টাকার চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন মানুষকে কোনও বেসরকারি সংস্থা ওই টাকা দিয়ে নেবে কি না, সেটা তো সংশ্লিষ্ট সংস্থার সিদ্ধান্ত।’’ কারা সূত্রের বক্তব্য, কিছু ক্ষেত্রে অতীত দেখেও হয় তো নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলি পিছিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও সরকার জোর খাটাতে পারে না। তাই ছোট মাপের ব্যবসা, দোকান এগুলি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। যাতে রোজগারের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকে। সেই কথা মাথায় রেখেই বন্দিজীবনে নানা ধরনের কাজও শেখানো হয়।

তবে কারা দফতরের একাংশ মনে করছে, সার্বিক ভাবে একটি উপদেষ্টা কমিটি থাকলে পুনর্বাসনের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার উপরে নজরদারি সম্ভব। কারও কোনও জায়গায় ক্ষোভ থাকলে তা-ও ওই কমিটিকে জানাতে পারবেন। সম্প্রতি এ ব্যাপারে বৈঠকে উপস্থিত কারা বিভাগের এআইজি, ডিআইজি-রা তাই এই কমিটি গঠনে সহমতও হয়েছেন। তবে শেষমেশ দফতরের শীর্ষ স্তরের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কবে এই কমিটি কাজ শুরু করে, সেটাই আপাতত দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal government Prisoners correctional home

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy