প্রতীকী ছবি।
অপুষ্ট শিশুর জন্য দুধ জোগালে অভাবের সংসারে সবটুকু তার পেটে যায় না। তার মায়ের জন্য যদি কিছু পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায়, নিজে না খেয়ে তা-ও হয়তো তিনি খাইয়ে দেন অন্য সন্তানকে।
নতুন বছরে তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আসা অতি-অপুষ্ট শিশুদের দুধ আর তাদের মায়েদের রোজ একটা করে ডিম খাওয়ানোর ব্যবস্থা করল নদিয়ায় জেলা পরিষদ। শর্ত একটাই, ওই দুধ বা ডিম বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ওখানে বসেই খেতে হবে।
নদিয়ার ৬৬২০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুর সংখ্যা তিন লক্ষের কিছু বেশি। তার মধ্যে মাঝারি অপুষ্ট শিশু প্রায় ৩৭ হাজার। অতি-অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা ৪০৬। এই শেষ গোত্রের জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা। নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলেন, “কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনও প্রকল্প নয়, আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকেই টাকা দেওয়া হচ্ছে।’’
এমনিতেই সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পে (আইসিডিএস) রোজ প্রতিটি শিশুকে অর্ধেক ডিমসিদ্ধ দেওয়া হয়। অতি-অপুষ্ট শিশুরা পায় একটি করে গোটা ডিম। যোগ হচ্ছে জেলা পরিষদের দেওয়া দু’শো মিলিলিটার দুধ আর তাদের মায়েদের জন্য একটি করে ডিমসিদ্ধ। কারণ, মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুদেরও সবল করা কঠিন। জেলার সুসংহত শিশুবিকাশ আধিকারিক ভাস্কর ঘোষ জানান, বাড়তি খাবারের জন্য মা-শিশু পিছু দিনে ১৫ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে। নানা হিসেবনিকেশ কষে ছ’মাসের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় আট লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা।
এর আগেও ‘শিশু সমৃদ্ধি’ নামে একটি প্রকল্প করেছিল জেলা পরিষদ। অতি-অপুষ্ট শিশুদের মাকে ছাতু, ডালিয়া বা স্বাস্থ্যকর পানীয়ের প্যাকেট দিচ্ছিল আইসিডিএস কেন্দ্র। তার আগে শিবির করে ওই শিশুদের চিহ্নিত করেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিছু শিশুর জন্য বিশেষ চিকিৎসা এবং কিছুর জন্য স্রেফ পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিছু দিন পরে দেখা যায়, অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। একই রকম অপুষ্ট রয়ে গিয়েছে ওই শিশুগুলি। দুর্বল তাদের মায়েরাও।
তখনই টনক নড়ে কর্তাদের। জেলা সুসংহত শিশুবিকাশ আধিকারিকের কথায়, “খাবার নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে দেওয়া হচ্ছে কি না, মা নিজের খাবার খাচ্ছেন কি না, অন্যেরা তাতে ভাগ বসাচ্ছে কি না, তা জানতে পারছিলাম না। সেই কারণেই এ বার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
নদিয়ায় বেশি অতি-অপুষ্ট শিশু আছে নাকাশিপাড়া ব্লকে। মোট ৪২টি। তার মধ্যে বিক্রমপুর গ্রামের দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দু’টি করে। গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রেহেনা খাতুন বলেন, “১ জানুয়ারি থেকে মায়েদের ডিম দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে শিশুদের দুধ।’’ দুধ জোগাড়ের দায়িত্ব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরই। রেহানা বলেন, ‘‘পরিষ্কার বলে দিয়েছি, দুধে যেন ভেজাল না দেওয়া হয়!”
ফল কতটা হয়, বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে মাস কয়েক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy