অভিযুক্ত: আদালত চত্বরে পিনকন কর্তা মনোরঞ্জন রায়। সোমবার তমলুকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
সারদা গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কিছু কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কমিশন গড়ে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বেসরকারি লগ্নি সংস্থা পিনকনে টাকা রেখে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, এ বার তাঁদেরও টাকা ফেরাতে চায় তারা। বিজ্ঞাপন দিয়ে আমানতকারীদের ডেকে পাঠনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টাকা লগ্নি করেও সময়মতো তা যে ফেরত পাননি, সেই প্রমাণ নিয়ে দেখা করতে বলা হবে তাঁদের।
পিনকনের কর্ণধার মনোরঞ্জন রায় এবং তাঁর তিন সঙ্গীকে সোমবার তমলুক আদালতে তোলা হয়। চার জনকেই ১৩ দিন ‘ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক অফেন্স’ (ডিইও) বা অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। মনোরঞ্জন কান্নায় ভেঙে পড়েন আদালত-চত্বরেই।
আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার মামলায় মনোরঞ্জন-সহ ওই চার জনকে কিছু দিন আগে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করে রাজস্থান পুলিশ। রবিবার রাতে মনোরঞ্জনকে জয়পুর থেকে কলকাতায় আনা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পিনকনের কিছু সম্পত্তি ‘অ্যাটাচ’ বা বাজেয়াপ্ত করেছে তদন্তকারী সংস্থা ডিইও। প্রতারিত আমানতকারীদের তালিকা তৈরির পরে ওই সম্পত্তির হিসেব নিয়ে যাওয়া হবে আদালতে। সেই সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে যে-টাকা পাওয়া যাবে, তা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া যায়, তার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করা হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পিনকনের বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বাড়ি, অফিস, জমি, নির্মীয়মাণ আবাসন প্রকল্প এবং বেশ কয়েকটি সংস্থা। সরকারি কর্তাদের দাবি, সারদা, রোজ ভ্যালির মতোই মানুষকে দ্রুত বহু গুণ টাকা ফেরতের লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল পিনকন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এবং পরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি যখন বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তে নামে, সেই তালিকায় পিনকনের নাম ছিল না। তাই সিবিআই বা ইডি এখনও পর্যন্ত পিনকন নিয়ে কোনও তদন্ত করেনি।
মাস আষ্টেক আগে ডিইও-র তৈরি করা বেআইনি লগ্নি সংস্থার তালিকায় উঠে আসে পিনকনের নাম। সরকারি এক কর্তা জানান, যে-চারটি সংস্থার নামে পিনকন টাকা তুলেছিল, তাদের এ রাজ্যে যত সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলোই মূলত অ্যাটাচ করা হচ্ছে। এই তালিকায় আছে পিনকনের মদের ব্যবসাও। মনোরঞ্জনের নিজের নামে ৩০ শতাংশ শেয়ার আছে এই মদের ব্যবসায়। কলকাতার আশেপাশে তাঁদের বেশ কয়েকটি মদ ও সর্ষের তেল তৈরির কারখানা আপাতত বন্ধ।
সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, ওই সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাক, সেটা তাঁরা চাননি। বাজারে পিনকনের তৈরি দেশি মদ, রাম, হুইস্কি ও ভদকা নিয়মিত বিক্রিও হয়। কিন্তু পিনকনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল করে দেওয়ার পর থেকে নগদের জোগান বন্ধ। তাই কাঁচামালের অভাবে বাধ্য হয়ে কারখানাগুলি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
পোস্টার-স্লোগানে মনোরঞ্জনের কড়া শাস্তির দাবি তুলে এ দিন তমলুকে আদালত-চত্বরে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো আমানতকারী। শুনানি শুরুর আগে টানা বিক্ষোভের ঘটনায় ক্ষুব্ধ মনোরঞ্জন তাঁর আইনজীবীকে বলেন, ‘পুলিশকে বিক্ষোভ থামাতে ব্যবস্থা নিতে বলুন।’ আইনজীবী অবশ্য তেমন অনুরোধ করেননি। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল-সহ পুলিশকর্তারা।
আদালতে মনোরঞ্জনের জামিনের আবেদন জানানো হয়নি। সরকারি আইনজীবী সৌমেন দত্ত দাবি করেন, অনেক কিছুই উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই এই চার জনকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) মৌ চট্টোপাধ্যায় কিছু ক্ষণের জন্য উঠে গেলে সেই ফাঁকে মনোরঞ্জন এজলাসে দাঁড়িয়েই ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। স্ত্রী মৌসুমি ও ছেলের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি তো কোনও দোষ করিনি। কত মানুষের উপকার করেছি। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ দিন দশেক অপেক্ষা করে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলেও জানান মনোরঞ্জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy