মানব না নিয়ম, অথচ পরিষেবাও চাইব, সেটি হবে না। নিয়ম না-মানলে পরিষেবাও মিলবে না। এবং তখন দোষারোপও করা যাবে না কাউকে।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমজনতাকে নরমে-গরমে পাঠ দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। বিষয়টিকে রাজ্যের মানচিত্রে ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যিক করাই তাদের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে বাংলার বৃহত্তম উৎসবকেও কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ধারণার অভাব রয়েছে রাজ্যের আমজনতা থেকে পুরপ্রতিনিধিদের অনেকের। তা নিয়ে তাঁদের সহজ পাঠ দিতে চাইছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সাযুজ্য রেখেই তৈরি হয়েছে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সহজ পাঠ’। কয়েক দিন আগে ওই বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ওই বইয়ে বিভিন্ন অলঙ্করণের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে বর্জ্যের বিষয়টি। দেখানো হয়েছে, কী ভাবে ‘এত্তা জঞ্জাল’-এর স্তূপের মধ্যে রয়েছেন এক ব্যক্তি। কোথাও দেখানো হয়েছে, অফিস যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির মাথায় বাড়ির উপর থেকে জঞ্জাল ফেলায় কী ভাবে নাজেহাল হলেন তিনি। তা দেখিয়ে বলা হয়েছে, এ দৃশ্য আর দেখতে চাই না। ভবিষ্যতের সুরক্ষায় চাই বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
শুরুতে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সহজ পাঠ’ এক লক্ষ ছাপানো হয়েছে। বিভিন্ন পুরসভাকে ওয়ার্ড-পিছু ২০-২২টি বই দেওয়া হচ্ছে। ইংরেজিতে বইটি লিখেছেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব সুব্রত গুপ্ত। তার বাংলা অনুবাদ এবং অক্ষর বিন্যাস করেছেন ওই দফতরেরই তিন অফিসার দেবারতি দত্তগুপ্ত, শান্তনু মুখোপাধ্যায় এবং শান্তনু বসু।
বইয়ের পাশাপাশি এই নিয়ে বিভিন্ন প্রচারপত্র, পোস্টারও তৈরি হয়েছে। কলকাতা পুর এলাকার পুরসভার মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে। জেলার ক্ষেত্রেও একই দায়িত্ব পালন করবে পুরসভাগুলি। দফতরের এক কর্তার মতে, এত বড় উৎসবে বহু মানুষ একত্র হন। ফলে সেখানে কোনও বার্তা দেওয়া হলে তা সহজেই অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এ ক্ষেত্রে পাড়া-বৈঠকের মাধ্যমে সচেতন করতে উদ্যোগী হচ্ছে বিভিন্ন পুরসভা।
জৈব (রান্নার বাড়তি সামগ্রী বা আনাজ) এবং অজৈব (প্লাস্টিক বা সেই জাতীয়) বর্জ্য পৃথকীকরণের বিষয়ে বিভিন্ন পুরসভায় পাঠ দেওয়া হয়েছে। দু’টি বর্জ্য আলাদা করে দিতে হবে বাসিন্দাদেরই। পৃথকীকরণ নিয়ে কোনও বাসিন্দা সচেতন না-হলে প্রয়োজনে শাস্তির পথে হাঁটতে পারে পুরসভা। সে-ক্ষেত্রে পৃথকীকরণ নিয়ে দু’বার বোঝানো (সতর্ক করা) হবে। তাতে কাজ না-হলে শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দার কাছ থেকে তৃতীয় বার বর্জ্য সংগ্রহই করবে না পুরসভা।
রাজ্যের ৮৫টি পুরসভায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজও শেষ করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে বিধাননগর পুরসভা অন্যদের টেক্কা দিয়েছে অনেকটাই। ভাল জায়গায় রয়েছে আসানসোল, উত্তরপাড়া, চুঁচুড়াও। এক কর্তার কথায়, ‘‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকটাই গা-ছাড়া মনোভাব ছিল বিভিন্ন পুরসভার মধ্যে। তা কিছুটা কেটেছে। একটা দিশা দেখা যাচ্ছে।’’