রাজ্য সরকারকে সংবিধানের কথা মনে করিয়ে দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে রাজ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। বোসের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে ‘গুন্ডারাজ’ চলছে। সাংসদ খগেন মুর্মুর উপর আক্রমণের পরে ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এক জন অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে ‘সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা’নেওয়া হবে।
রাজ্যপালের বক্তব্যে তৃণমূল প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারির ইঙ্গিত পেলেও রাজ্যপাল জানান, তিনি ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারার কথা বলছেন না। তাঁর রিপোর্টে নাগরাকাটার ঘটনার পরে রাজ্যের কিছু অংশে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার প্রস্তাব রয়েছে বলে সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, এ দিনই পরে জলপাইগুড়ি পুলিশ জানায়, সাংসদ-বিধায়কের উপর আক্রমণের ঘটনায় দু’জন অভিযুক্তকে গ্রেফতারকরা হয়েছে।
রাজ্যপালের মন্তব্য সম্পর্কে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এ সব কথা বলার কে? তাঁর সীমার মধ্যে থাকা উচিত। মনে রাখা উচিত, আমরা (সরকার) নির্বাচিত, রাজ্যপাল মনোনীত। এক জন সাধারণ আইএএস অফিসার রাজ্যপাল হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কি প্রভু? রাজ্য সরকার কি কেন্দ্রের প্রজা?’’ একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলায় দেশে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসার মনোভাব দেখিয়েছেন।’’
বোস আজ দিল্লিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘আইনানুগ এবং সংবিধানসম্মত পদক্ষেপে’র কথা বললেও বিষয়টি স্পষ্ট না করায় প্রশ্ন করা হয়, তবে কি ৩৫৫ অথবা ৩৫৬ ধারা রাজ্যে জারি করার ভাবা হচ্ছে? আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। বোসের কথায়, “গত কয়েক দিন ধরে বাংলার রাস্তায় কী চলছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। এক দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্য দিকে মানুষের অত্যাচার। আইনশৃঙ্খলার গলা টিপে ধরা হচ্ছে। যাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার কথা, তাঁরাই অন্যদের কথায় চলছেন। রক্ষকই এখানে ভক্ষক।”
কড়া সুরে রাজ্যপাল বলেন, “বাংলার মানুষের ভাল পুলিশি ব্যবস্থা এবং প্রশাসন পাওয়া উচিত৷ এই পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ গুন্ডারাজ চলছে, মানুষ ভয়ে ভয়ে রয়েছেন৷ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যেরই৷ রাজ্যের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। যদি এই অরাজকতার মোকাবিলা না করা যায়, তা হলে রাজ্যের মানুষই ফল ভোগ করবেন, তাঁদের মূল্য দিতে হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)