Advertisement
E-Paper

বিশেষজ্ঞ চাই বলেই বন্ডে ছাড় রাজ্যের

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এ রাজ্যে ধরে রাখতে তাঁদের দাবির কাছে অনেকটাই মাথা নোওয়াচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এই বিশেষজ্ঞ মানে কারা?

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এ রাজ্যে ধরে রাখতে তাঁদের দাবির কাছে অনেকটাই মাথা নোওয়াচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

এই বিশেষজ্ঞ মানে কারা?

এমবিবিএস এবং মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর বা এমডি, এমএস পাশ করার পর যাঁরা পোস্ট ডক্টরাল অর্থাৎ ডিএম ও এমসিএইচ পাশ করেন, তাঁরা।

এ রাজ্যে ডাক্তারিতে পোস্ট ডক্টরাল পড়তে গেলে এতদিন চিকিৎসকদের একটি বন্ড সই করতে হত। বন্ডে বলা ছিল, পোস্ট ডক্টরাল পাশ করার পর তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে তিন বছর সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা দিতে হবে। তা না-করলে সরকারকে ক্ষতিপূরণবাবদ দিতে হবে মোটা টাকা। এতে আপত্তি তুলেছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অধিকাংশই। সম্প্রতি স্বাস্থ্যভবনে এক গোপন বৈঠকে এই বন্ডের নিয়ম অনেকটা শিথিল করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।

সেটা কী রকম?

এতদিন রাজ্যে পোস্ট ডক্টরাল পড়তে গেলে ৩০ লক্ষ টাকার এক বন্ডে ডাক্তারদের সই করতে হত। পাশ করার পর সরকারি হাসপাতালে তিন বছর পরিষেবা না-দিলে তাঁদের স্বাস্থ্য দফতরকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হত। যদি তিন বছরের জায়গায় এক বছর পরিষেবা দিতেন তা হলে বাকি দু’বছরের জন্য ২০ লক্ষ টাকা এবং যদি ২ বছর সরকারি জায়গায় পরিষেবা দেন তা হলে বাকি এক বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হত।

এখন যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে তাতে বন্ডের সময়সীমা তিন বছর থেকে কমিয়ে ১ বছর করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ডিএম, এমসিএইচ পাশের পর চিকিৎসকদের মাত্র ১ বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে হবে। তা না দিলে সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ১০ লক্ষ টাকা।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এর ফলে ডিএম, এমসিএইচ পাশ চিকিৎসকদের উপরে যে অর্থদণ্ডের খাঁড়া ঝুলে থাকত তা অনেকটা চলে যাবে। এর পর এমডি, এমএস পড়ুয়াদের উপর থেকেও বন্ডের নিয়ম একই ভাবে শিথিল হবে বলে জানিয়েছেন সুশান্তবাবু।

স্বাস্থ্যভবনে গত ২৯ ডিসেম্বরের ওই বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবগুলি লিখিত ভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং সেই তালিকায় পয়লা নম্বরে রয়েছে বন্ড শিথিলের কথা। সেখানে খোলাখুলিই স্বাস্থ্যকর্তারা মেনেছেন, ডিএম ও এমসিএইচ পড়ার পর টানা তিন বছর বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার নিয়মে ধৈর্য হারাচ্ছেন অনেক চিকিৎসকই। তাই তাঁরা অন্য রাজ্যে গিয়ে ডিএম, এমসিএইচ পড়ছেন। এ রাজ্যে পোস্ট ডক্টরালে অসংখ্য আসন খালি পড়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছ‌েন, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যে একের পর এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল খুলছে। অথচ রাজ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের আকাল। তাই বন্ডের ভার লাঘব না করে যে উপায় নেই তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির। ২০১৬ সালে এই বিষয়ে রাজ্যে এমসিএইচ-এ ১৪টি আসনের মধ্যে ১০টিই খালি ছিল। বেশিরভাগ মেডিক্যাল কলেজে কার্ডিওথোরাসিকে পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিয়মিত অস্ত্রোপচারেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই ২৯ তারিখের বৈঠকে বিশেষ ভাবে সব মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিকের বিভাগীয় প্রধানদের ডাকা হয়েছিল। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, তাঁরাও একযোগে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের ধরে রাখতে হলে বন্ডের নিয়ম শিথিল করা ছাড়া গতি নেই।

সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেখা যাচ্ছিল, অনেকেই বন্ডের জন্য এ রাজ্যে ডিএম-এমসিএইচ-পড়তে চাইছে না। প্রচুর আসন খালি পড়ে থাকছে। অনেকে আবার বন্ড সই করে পোস্ট ডক্টরালে ঢুকছেন। কিন্তু পাশ করার পরে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েই বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। তাই পোস্ট ডক্টরালের পর তাঁদের তিনের জায়গায় এক বছর সরকারি জায়গায় কাজ করার বন্ড সই করানো হবে বলে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। এক বছরের জন্য এঁদেরকে পাওয়া গেলেও বিশেষজ্ঞের আকাল অনেকটা মিটবে।’’

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের চিকিৎসা সেলের তরফে সভাপতি ইন্দ্রনীল খান এবং চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, পোস্ট ডক্টরালে বিহার, ঝাড়খন্ড, দিল্লি বা মহারাষ্ট্রের মতো অনেক রাজ্য চিকিৎসকদের অনেক বেশি ভাতা দেয়। পশ্চিমবঙ্গে যা অত্যন্ত কম। ভাতা না-বাড়ালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভিন রাজ্যে ডিএম, এমসিএইচ পড়া আটকানো যাবে না।

West Bengal Health Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy