Advertisement
E-Paper

আগুন নেভানোর কাজে ব্রাত্য এ রাজ্যের মেয়েরা

২০০৩ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দমকলের চাকরির সুযোগ পেয়েও তাঁকে কাজে নেওয়া হয়নি। কারণ একটাই, ওই প্রার্থী ছিলেন ‘মহিলা’। শতবর্ষপ্রাচীন দমকল বিভাগের চাকরিতে এ রাজ্যে মহিলারা এখনও বঞ্চিত থাকলেও অনেক আগেই দিশা দেখিয়েছে অন্য রাজ্য।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫০
জয়পুরে দমকলের মহিলা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরে দমকলের মহিলা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

২০০৩ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দমকলের চাকরির সুযোগ পেয়েও তাঁকে কাজে নেওয়া হয়নি। কারণ একটাই, ওই প্রার্থী ছিলেন ‘মহিলা’। শতবর্ষপ্রাচীন দমকল বিভাগের চাকরিতে এ রাজ্যে মহিলারা এখনও বঞ্চিত থাকলেও অনেক আগেই দিশা দেখিয়েছে অন্য রাজ্য। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রে আগুন নেভানোর কাজে পুরুষ কর্মীদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করছেন মহিলা কর্মীরা। কেরলেও মহিলা ফায়ার অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

২০০৩ সালেই তামিলনাড়ু ফায়ার সার্ভিসে দেশের প্রথম কোনও মহিলা আধিকারিক দমকলের মতো আপদকালীন পরিষেবার কাজে যোগ দিয়ে নজির গড়েন। মীনাক্ষী বিজয়কুমার এখন তামিলনাড়ু ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের ক্ষেত্রে মহিলা, পুরুষ ভেদাভেদ থাকা ঠিক নয়। এখন মহিলারাও সমানতালে এগোচ্ছেন। সব রাজ্যে এই কাজে মেয়েদের সুযোগ দেওয়া দরকার।’’

ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হওয়ার পরে মীনাক্ষী ইংল্যান্ড থেকে ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। ২০০৩ সালে তামিলনাড়ু ফায়ার সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি চাকরিতে ঢোকেন। পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার সার্ভিসে এখনও মহিলারা কাজের সুযোগ না পাওয়ায় বেশ অবাক মীনাক্ষীদেবী। তাঁর খেদ, ‘‘ওখানে তো মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। মেয়েরা যে পুরুষের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আট বছর তিনি ক্ষমতায় থাকার পরেও পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার সার্ভিসে মেয়েরা সুযোগ না পাওয়ায় বেশ অবাক হচ্ছি।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মেয়েরা তো রান্নাঘরও সামলান। এই পেশায় মেয়েরা বেশি করে যোগ দিলে সমাজ উপকৃত হবে।’’

তামিলনাড়ু ফায়ার সার্ভিসে দু’জন ডেপুটি ডিরেক্টরই মহিলা। তা ছাড়া, ন’জন মহিলা স্টেশন অফিসার রয়েছেন। মধ্য তামিলনাড়ুর ভীরুগামবক্কম ফায়ার স্টেশনে মহম্মদ আরিফা রাজ্যের প্রথম মুসলিম মহিলা হিসেবে স্টেশন অফিসার পদে যোগ দিয়েছেন। আরিফা ২০১৩ সালে তামিলনাড়ু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে প্রথমে পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০১৫ সালে পুলিশ সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে ফায়ার সার্ভিসে আসেন। পুলিশের চাকরি ছে়ড়ে দমকলের মতো ঝক্কির পেশায় এলেন কেন? তামিল সাহিত্য ও সমাজতত্ত্বের স্নাতকোত্তর আরিফার জবাব, ‘‘তামিলনাড়ুতে সব থেকে সম্মানের পেশা দমকল।’’ মীনাক্ষী বা আরিফা, এঁরা সবাই বিবাহিতা। স্বামী, সন্তান, সংসার সামলে চব্বিশ ঘণ্টাই ওঁরা আগুন নেভানো বা উদ্ধারের মতো আপতকালীন পরিষেবার কাজ হাসিমুখে সামলাচ্ছেন। ২০০৩ সালে সুনামি ও ২০০৫ সালে বন্যায় বিপর্যস্ত চেন্নাইয়ে উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন মীনাক্ষী।

মুম্বই ফায়ার ব্রিগেডেও এক ঝাঁক মহিলা এই ‘চ্যালেঞ্জিং’ পেশাকে হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন। প্রায় ১৩২ বছরের পুরনো মুম্বই ফায়ার ব্রিগেডে এখন তিন জন ফায়ার অফিসার ও ১২২ জন মহিলা কর্মী রয়েছেন। মুম্বই ফায়ার ব্রিগেডের চিফ ফায়ার অফিসার প্রভাত রাহাংডালে বলেন, ‘‘২০১৫ সাল থেকে এখানে মেয়েরা কাজের সুযোগ পাচ্ছে। এত বেশি মেয়েরা এই পেশায় আসায় শীঘ্রই আরও

দু’হাজার মহিলা ফায়ার অপারেটর নিয়োগ করা হবে।’’ কেরল ফায়ার সার্ভিসের ডিজি হেমাচন্দ্র বলেন, ‘‘সরকারি তরফে আমাদের এখানে মহিলাদের নিয়োগের অনুমোদন মিলেছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই একশো মহিলা ফায়ার অপারেটর নেওয়া হবে।’’ প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উড়ান পরিষেবায় আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছেন বাঙালি কন্যা তানিয়া সান্যাল। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে ফায়ার সার্ভিসে মহিলাদের সুযোগ দেওয়া দরকার।’’

এ রাজ্যে মেয়েরা বঞ্চিত কেন? দমকলের প্রাক্তন এডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাস বললেন, ‘‘২০০৩-এ এক মহিলা পিএসসির পরীক্ষা দিয়ে দমকলের চাকরিতে ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হলেও তাঁকে নেওয়া হয়নি। তার পরেই সরকারি তরফে তৎকালীন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মহিলাদের নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছিল। আমরা খসড়া প্রস্তুত করলেও তা ভেস্তে যায়।’’ আর দমকলের বর্তমান ডিজি জগমোহনের মন্তব্য, ‘‘এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। উঁচু মহলে কথা বলুন।’’ দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর কথায়, ‘‘সবে মন্ত্রিত্বের ভার নিয়েছি। বিষয়টি ভেবে দেখব।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy