Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Health

জমি-শর্ত রদে দেরি, হাতছাড়া স্বাস্থ্য-সুযোগ

মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে জমির বাধ্যবাধকতাই তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ (এনএমসি)। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

সময়ের হিসেবে ঠিক দিন দশেকের দেরি। কেন্দ্র জমি-শর্ত রদে এই দেরি করায় বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ গড়ার মতো স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুযোগ হারাল পশ্চিমবঙ্গ। আবেদন করেছিল ৩১টি সংস্থা। কিন্তু জমি-জটের দরুন তাদের মধ্যে মাত্র দু’টি সংস্থাকে বঙ্গে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য সরকারি হাসপাতালের শয্যা ভাড়া দেওয়ার অনুমতি দিতে পেরেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ঠিক যে-দিন ওই দুই সংস্থার অনুমোদন পাকা হয়েছে, তার ১০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরকে কিছুটা হতবাক ও বিব্রত করে দিয়ে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে জমির বাধ্যবাধকতাই তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ (এনএমসি)।

স্বাস্থ্য শিবিরের বক্তব্য, কেন্দ্র ১০-১৫ দিন আগে এটা ঘোষণা করলে বহু সংস্থাকেই সরকারি হাসপাতালের শয্যা ভাড়া নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ গড়ার ছাড়পত্র দিতে পারত স্বাস্থ্য দফতর। জমি-জট বাধা হত না। তাতে ভাড়া বাবদ সরকারের আয় বাড়ত, ফি-বছর অনেক বেশি চিকিৎসক পাশ করে বেরোতে পারতেন। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সেটা আর সম্ভব নয়। কারণ, এনএমসি-র ঘোষণার আগেই রাজ্যে বাছাই পর্ব চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘৩১টি সংস্থার মধ্যে প্রথমে পাঁচটিকে বেছে নেওয়া হয়। চূড়ান্ত বাছাইয়ে ঠাঁই পায় দু’টি সংস্থা। তারা বিষ্ণুপুর ও বোলপুরে দু’টি সরকারি হাসপাতালের শয্যা ভাড়া নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ গড়বে।’’

বাকি ২৯টি আবেদন বাতিল হল কেন? স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, ওই ২৯টি সংস্থার মধ্যে ২৮টির মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য ন্যূনতম ২০ একর জমি ছিল না। দেশে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা এনএমসি-র নির্দেশ অনুযায়ী এত দিন গ্রামাঞ্চলে একসঙ্গে ২০ একর বা শহরাঞ্চলে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পাশাপাশি দু’টি জমি (যার একটির ন্যূনতম আয়তন ১৫ একর হওয়া আবশ্যিক) থাকলে তবেই মেডিক্যাল কলেজ গড়া যেত। বাকি একটি সংস্থার সেই জমি ছিল, কিন্তু তারা শুধু কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ (জেএনএম) বা গাঁধী হাসপাতালের শয্যা ভাড়া নিতে চায়। জেএনএম আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। আর গাঁধী হল হৃদ্‌রোগের স্পেশালিটি সহাসপাতাল। ফলে সেগুলির শয্যা ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আবেদন বাতিল করা হয়।

রাজ্য ৫ ডিসেম্বর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে সরকারি হাসপাতালের শয্যা ভাড়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাছাই চূড়ান্ত হয়। কিন্তু মূলত জমির জন্য ২৮টি আবেদন বাতিল করার ১০ দিনের মধ্যে এনএমসি জমির শর্ত তুলে দেয়। এতে আফসোস যাচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতরের।

রাজ্যে ডাক্তারের ব্যাপক ঘাটতি মেটাতে চাই মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু তা গড়ার বে? কিছু শর্ত আছে। অন্যতম শর্ত, সংশ্লিষ্ট সংস্থার অন্তত ৩০০ শয্যার হাসপাতাল থাকতে হবে। তা না-থাকায় অনেক সংস্থা মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে এগোতে পারে না। তাই স্বাস্থ্য দফতর তাদের কিছু হাসপাতালের শয্যা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন মহলে তার সমালোচনা হয়। এ ভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে বেসরকারি হাতে বেচে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে শুরু হয়েছিল প্রবল বিতর্ক।

২০১৩-১৪ সালে স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ‘প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ’ বা পিপিপি মডেলে কিছু সরকারি হাসপাতাল চালানো হবে। নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কার্শিয়াং, কোচবিহারের কিছু হাসপাতালকে এই মডেলে চালানোর জন্য দু’টি সংস্থার সঙ্গে ‘মউ’ বা সমঝোতাপত্র সই হয়। কিন্তু আজও সেই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। একটি সংস্থা ইতিমধ্যে প্রকল্প থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, অন্য সংস্থাটিও সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর মেডিক্যাল কলেজ গড়বে না। তার বদলে কার্শিয়াংয়ে প্যারামেডিক্যাল কলেজ গড়বে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE