সিপিমের কর্মশালায় অশোক ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।
নাগরিকত্বের প্রশ্নে দেশ জুড়ে যত রাজনৈতিক বিতর্ক ও হইচই হোক না কেন, স্থানীয় এলাকার সমস্যাকে সামনে রেখেই পুরভোটে লড়তে চাইছে সিপিএম। পুরভোটের কৌশল ব্যাখ্যা করার জন্য জেলায় জেলায় কর্মশালা শুরু করেছে তারা। এই বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী ও শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে এ রাজ্যে সরব তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস। তাদের সকলেরই নিশানায় বিজেপি। কিন্তু পুরভোটে বিজেপি যেমন বড় শক্তি হয়ে উঠতে চায়, তেমনই আবার হাতে গোনা গোটাকয়েক বাদে সব পুরসভার ক্ষমতা এখন তৃণমূলের দখলে। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, স্থানীয় বিষয় নিয়ে রাজ্যের প্রায় কোনও এলাকাতেই বিজেপি আন্দোলন দানা বাঁধাতে পারেনি। তাই স্থানীয় সমস্যা নিয়ে সরব হলে এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগে সুবিধা হবে এবং বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিকে ঠেকিয়ে তৃণমূলেরও বিরোধিতা করা যাবে বলে তাঁদের মত।
জেলায় জেলায় ঘুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু যেমন বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে। কিন্তু সবিস্তার সে সব আলোচনার মঞ্চ পুরভোট নয়। কোন কাউন্সিলর ‘কাটমানি’ তুলেছেন, কোন পুরসভা কেমন ভাবে ‘বেনিফিসিয়ারি’-রাজ চালাচ্ছে, নিজেদের লোক ঢোকানের জন্য কেমন টাকার খেলা হয়েছে, কোন ওয়ার্ডে মানুষের কাছে পরিষেবার সমস্যা কী— এখানে এই সব তুলে আনতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি অশোকবাবুর পরামর্শ, বহু মানুষ ‘ওপেন নয়, গোপেনে থেকে’ বামেদের সমর্থন করেন। তাঁদের সমর্থন ভোটের বাক্সে টেনে আনতে হবে। এবং তার জন্য সিপিএমের স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরও ভয় ভেঙে এলাকায় এলাকায় অনেক বেশি সভা, মিছিল করতে হবে।
স্থানীয় প্রশ্নে নজর দেওয়ার পরামর্শের পাশাপাশিই কংগ্রেসের সঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে জোটের কথাও বলা হচ্ছে কর্মশালায়। অশোকবাবুর নিজের পুরসভা শিলিগুড়িতে প্রার্থী-তালিকা প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছে, ভোট ঘোষণার কোনও ঠিক না থাকলেও কাউন্সিলর বা প্রার্থীরা ময়দানে নেমেও পড়েছেন। প্রতি জেলাতেই পুর-জোটের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে বলছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় বিষয়ে জোর আর জোট— এই দু’টোই মাথায় রেখে চলতে চাইছি আমরা।’’
কলকাতা পুরসভায় বাম-কংগ্রেস আসন ভাগের প্রক্রিয়া অবশ্য এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মঙ্গলবার কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সিপিএম ৭০-এর কিছু বেশি ওয়ার্ডে লড়তে চায়। তবে ফ্রন্ট শরিকেরা কে কোন আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়বে, তা নিয়ে এখনও জটিলতা আছে। আবার কিছু আসন ফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলির জন্যও ছাড়তে চায় সিপিএম। কংগ্রেস চায়, এলাকা ধরে ওয়ার্ডের সুষম বণ্টনও হোক। উত্তর কলকাতায় ১ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু ৬ নম্বর তাদের দিতে চায় বামেরা— এমন ভাগাভাগিতে কংগ্রেসের রাজি হওয়া মুশকিল। আগামী সপ্তাহের শুরুতে ফের আলোচনায় বসতে পারেন কলকাতার বাম ও কংগ্রেস জেলা নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy