Advertisement
E-Paper

সেই রয়্যাল বেঙ্গল মৃত অবস্থায় মিলল লালগড়ে, শরীরে ক্ষতচিহ্ন

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাঘের গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। বাঘটিকে বল্লম গিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে।   

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:৫৮
লালগড়ের জঙ্গলে মিলল সেই রয়্যাল বেঙ্গলের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

লালগড়ের জঙ্গলে মিলল সেই রয়্যাল বেঙ্গলের দেহ। নিজস্ব চিত্র।

জীবন্ত অবস্থায় তাকে ধরার নানা চেষ্টা করা হয়েছিল। নানা রকম আয়োজনও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই ধরা যায়নি।

অবশেষে দু’মাস পরে তার খোঁজ মিলল। কিন্তু মৃত অবস্থায়! শুক্রবার দুপুরে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদরার বাগঘোরার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল সেই রয়্যাল বেঙ্গলের দেহ।

জঙ্গলমহলে এখন আদিবাসীদের শিকার উত্‌সব চলছে। এ দিন সকালে বাগঘোরার জঙ্গলে শিকারে গিয়েছিলেন একদল আদিবাসী যুবক। দলে প্রায় ৩০- ৪০ জন ছিলেন। যুবকেরা জানিয়েছেন, জঙ্গলের মধ্যে একটি খাল রয়েছে। সেই খালের সামনেই ঘাপটি মেরে বসেছিল বাঘটি। খালের উপর দিয়ে যুবকদের দলটি যাওয়ার সময় বাঘ হামলা করে। জখম হন বছর ছত্রিশের বাবলু হাঁসদা এবং বছর উনিশের বাদল হাঁসদা।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত: ডিভিশন বেঞ্চে তৃণমূল, কিন্তু স্থগিতাদেশ বহালই রইল

আরও পড়ুন: বন্‌ধের কলকাতা স্বাভাবিক, বিক্ষিপ্ত গোলমাল জেলায়

বাবলুর কথায়, “আমরা খালের উপর দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকছিলাম। তখনই বাঘটি হামলা করে। দেখে মনে হল বাঘটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওর হয়ত মনে হয়েছিল, আমরা ওর খোঁজেই ঢুকছি।” বাদলের কথায়, “বাঘটা যে খালের পাশে ছিল, আমরা দেখিনি। হঠাত্‌ই গর্জন করে হামলা করে। কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচেছি।” এ দিন জঙ্গল থেকে মরা বুনোশুয়োরও উদ্ধার হয়েছে। দেহের কিছু অংশ পড়েছিল। বনকর্তারা প্রায় নিশ্চিত, বাঘই এই বুনোশুয়োর মেরেছে। অর্ধেকটা খেয়েওছে।

এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই জঙ্গল থেকেই রয়্যাল বেঙ্গলের দেহ উদ্ধার হয়। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে যান বন দফতরের আধিকারিকরা। কী ভাবে বাঘের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে বন দফতর থেকে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। আইজি ওয়াইল্ড লাইফ জানান, কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

লালগড়ের মেলখেরিয়া গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া সেই রয়্যাল বেঙ্গল। ফাইল চিত্র।

তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাঘের চোখে ও কানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। বাঘটিকে বল্লম দিয়ে মারা হয়েছে। বাঘের দেহের অদূরেই একটি বল্লম পাওয়া গিয়েছে।

দু’মাসেরও বেশি সময় হল জঙ্গলমহলে বাঘের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। সেই জানুয়ারির শেষের দিকে প্রথম লালগড়ের জঙ্গলে পায়ের ছাপ মেলে। পরে ফেব্রুয়ারির গোড়ায় বাঘের ছবিও ক্যামেরাবন্দি হয়। এই সময়ের মধ্যে বাঘ ধরতে কম চেষ্টা হয়নি জঙ্গলমহলে। শুরুতে ছাগলের, পরে শুয়োরের টোপ দেওয়া খাঁচা পাতা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাঘ আর ধরা পড়েনি। উল্টে গোয়ালতোড়ের কাদরার জঙ্গলে এক ব্যক্তি বাঘের আক্রমণে জখম হয়েছেন। বাঘ ধরতে গিয়ে বিশেষ গাড়িতে দমবন্ধ হয়ে দুই বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

এত কিছু করার পরেও বাঘকে জীবন্ত ধরা গেল না কেন, তা নিয়ে বন দফতরের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে ইতিমধ্যেই।

প্রথমত, ড্রোন দিয়ে তল্লাশি চালানো, ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো, সুন্দরবন থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনানোর পরেও কেন বাঘটার কেন হদিস পেল না বন দফতর।

দ্বিতীয়ত, এ রকম খোলা জঙ্গলে বাঘ ধরাটা সত্যিই কঠিন। বাঘ ধরার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। জঙ্গলে এখানকার লোকজন মাঝে মধ্যেই শিকারে যান। এটা জানা সত্ত্বেও কেন বাঘের নিরাপত্তা কেন সুনিশ্চিত করা গেল না?

তৃতীয়ত, এত বড় বাঘটাকে কী ভাবে বাগে আনা সম্ভব হল? তা হলে কি সকালে পাওয়া আধখাওয়া যে শুয়োর পাওয়া গিয়েছে জঙ্গলে, তাতে বিষ দেওয়া হয়েছিল?

Lalgarh Royal Bengal Tiger Lalgarh forest লালগড়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy