রাজনীতির গণ্ডি থাকবে উপরে উপরে। যেমন থাকে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্ব থেকেই অশান্তি যত বাড়ছে, শাসক দলের বিরুদ্ধে তলায় তলায় বিরোধীদের একজোট হওয়ার তাগিদও বাড়ছে। একজোট হয়ে রুখে না দাঁড়াতে পারলে প্রতিরোধ যে সম্ভব নয়, তা বুঝে বিরোধী দলের নেতারাও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের প্রয়োজনীয় সঙ্কেত দিয়ে রাখছেন।
মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের হাতে বিজেপি নেতা-কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ এসেছে। সেই প্রসঙ্গে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘বিজেপির লোকজনের উপরে হামলা হয়েছে বলে ধন্য ধন্য তো করব না! আক্রমণের নিশ্চয়ই নিন্দা করব।’’ বিমানবাবুর সংযোজন, ‘‘প্রথম দিন বামেরা বেশি মার খেয়েছিল, দ্বিতীয় দিন বিজেপি খেল। লড়াইটা হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্র বাঁচানোর। শাসক দল বলেছে, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত চাই। আর রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন প্রত্যাহারের বাড়তি সময় রেখেছে। বাংলায় গণতন্ত্রের নতুন পাঠ ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে!’’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘প্রথম রাতেই বেড়াল মারতে না পারলে গৃহস্থের পাতে কিছু পড়বে না! বাংলা সব হারাতে বসেছে। সবহারাদের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। প্রতিরোধ চাই এখনই।’’
বিমানবাবু, সূর্যবাবুদের কথায় স্পষ্ট, তৃণমূলের তাণ্ডব রোখাই এখন তাঁদের প্রধান মাথাব্যথা। শাসক দলের মোকাবিলায় তৃণমূল স্তরে দলের ভেদাভেদ মুছে সব বিরোধীর একজোট হওয়ার যুক্তি সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে। আলিমুদ্দিনে বসে এ দিন বিমানবাবু যদিও বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই কী ভাবে হবে, জানি না। এই তো সবে বিজেপি রামনবমীর ডাক দিল আর তৃণমূল রামসেবায় নেমে পড়ল। তার পরে হনুমান জয়ন্তী। এই রামসেবক আর হনুমান সেবকদের বিরুদ্ধে কী ভাবে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ হবে?’’ একই দিনে আবার সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বিরোধীদের জোট বেঁধে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিক, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। কিন্তু শাসক দল কাউকেই মনোনয়ন দাখিল করতে দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-সহ সব বিরোধী একজোট হয়ে মনোনয়ন জমা করলে আপত্তি নেই।’’