Advertisement
E-Paper

রাত জাগছে বাগঘোরা

শুক্রবার রাতে ভাল ঘুম হয়নি বিমল মাহাতোর। বিমল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কাল, সোমবার তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। বাগঘোরার বাসিন্দা এই তরুণের কথায়, “সব সময় কেমন যেন একটা ভয় করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি বাঘ এল!”

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩২
শান: পাছে বাঘ আসে, তাই অস্ত্রের ধার পরীক্ষা। শনিবার বাগঘোরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

শান: পাছে বাঘ আসে, তাই অস্ত্রের ধার পরীক্ষা। শনিবার বাগঘোরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

ডোরাকাটার আতঙ্ক ক্রমেই চেপে বসছে গোটা এলাকায়।

শুক্রবার রাতে ভাল ঘুম হয়নি বিমল মাহাতোর। বিমল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কাল, সোমবার তাঁর পরীক্ষা রয়েছে। বাগঘোরার বাসিন্দা এই তরুণের কথায়, “সব সময় কেমন যেন একটা ভয় করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি বাঘ এল!” চাঁদড়া হাইস্কুলের ছাত্র বিমল বলছিল, “এই তো সেদিনই ঘরের পাশ দিয়ে হাতির পাল গেল। কিন্তু বাঘ কখনও চোখে দেখিনি। তাই ভয়টাও বেশি।” বাগঘোরারই বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের সীতা মাহাতোও বলছিলেন, “গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে বাঘ ঘুরে বেড়ালে কার আর ঘুম আসে! ক’টা দিন মনে হয় রাত জেগেই কাটাতে হবে।”

শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদড়া রেঞ্জের এই বাগঘোরার জঙ্গলে বাঘের দেখা মিলেছে বলেই দাবি। তিন যুবক বাঘের আঁচড়ে জখমও হয়েছেন। তবে শনিবার আর নতুন করে বাঘ-কাণ্ডে কোনও সংযোজন নেই। নতুন করে কোথাও বাঘের পায়ের ছাপ মেলেনি। শুক্রবার বাগঘোরার জঙ্গলে যে খালের সামনে বাঘ এসেছিল, এ দিনও সেখানে গিয়েছিলেন বনকর্মীরা। এসেছিলেন বাঘ ধরতে সুন্দরবন থেকে আসা দলটির (ট্র্যাঙ্কুলাইজেশন টিম) সদস্যরা। জঙ্গলের মধ্যে নখের আঁচড়ের দাগ মেলে। সব দেখে বনকর্মীদের অনুমান, এই জঙ্গলে এখন বাঘের থাকার সম্ভাবনা কম। সম্ভবত সে লালগড়ের জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। এক বনকর্মীর কথায়, “বাঘটা দিন তিনেক বাগঘোরার জঙ্গলে ছিল। এলাকা চেনার চেষ্টা করেছে। পরিবেশ ভাল লেগেছে বলেই এখানে ছিল। ফলে, এখানে ও আবার ফিরতেই পারে।’’ শুক্রবার যে ভাবে বাগে এসেও বাঘ ফস্কে গিয়েছে, ধরেও ধরা পড়েনি, সেই নিয়ে আফশোসের শেষ নেই এলাকায়। বন দফতরের যুক্তি, জঙ্গলে অবাধ যাতায়াত ঠেকানো যাচ্ছে না বলেই, বাঘ ধরতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। শনিবার বনকর্মীরা গ্রামে গ্রামে প্রচার করেছেন, ‘কেউ জঙ্গলে যাবেন না। শিকার করতে কিংবা কাঠ, পাতা সংগ্রহে গেলে প্রাণহানি হতে পারে। চাঁদড়া বনাঞ্চলে হাতির পাশাপাশি বাঘ দেখা গিয়েছে।’

তারপরেও এ দিন বাগঘোরার কেউ কেউ জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়েছেন, কেউ গিয়েছেন পাতা কুড়োতে, কেউ বা শিকারে গিয়েছেন। স্থানীয় লক্ষ্মীরানি মাহাতোর কথায়, “জঙ্গলে গিয়ে কাঠ আর পাতা না- কুড়োলে আমাদের সংসার চলবে কি করে? জঙ্গল যে আমাদের রুটি-রুজি।” তাই নিজেরাই আত্মরক্ষার বন্দোবস্ত করছেন জঙ্গলবাসী মানুষজন। বাড়ির দাওয়ায় বসে বল্লমে শান দিচ্ছিলেন উত্তম। বাগঘোরার এই যুবকের কথায়, “তির-ধনুক, বল্লমগুলো সব দেখে রাখছি। হঠাৎ বাঘ চলে এলে বাঁচতে হবে।”

Bagaura Royal Bengal Tiger West Midnapore Lalgarh বাঘ বাগঘোরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy