সঞ্জয় রায়
যকৃতের রক্তনালি ফেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল ভীষণ ভাবে। সেই ক্ষরণ রুখতে যে ‘এম্বোলাইজেশন’ বা সেলাই দেওয়ার কথা, সেটা করা হয়নি। বার করা হয়নি পেটে জমাট বাঁধা প্রায় আড়াই লিটার রক্ত।
চিকিৎসায় এই গাফিলতির জেরে বছরখানেক আগে মারা যান ডানকুনির যুবক সঞ্জয় রায়। সেই গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় ইএম বাইপাসের অ্যাপোলো হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন সাময়িক ভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল।
বৃহস্পতিবার কাউন্সিল সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাপোলো হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক উষা গোয়েনকার এক বছর এবং শল্যচিকিৎসক শ্যামল সরকারের ছ’মাস রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাস্তি চলাকালীন তাঁরা রোগী দেখতে বা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পারবেন না। কবে থেকে শাস্তির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, সেটা ঠিক হবে কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠকে।
সাময়িক ভাবে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে বলবৎ করা হল না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে কাউন্সিলের অন্দরেই। কাউন্সিলের এক সদস্যের মন্তব্য, প্রভাবশালী চিকিৎসক শিবিরের চাপেই শাস্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত রূপায়ণের বিষয়টিও ওই শিবিরের চাপেই ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কাউন্সিল এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ‘‘রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব, পরিজনদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া, অমানবিক আচরণের জন্য কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
পথ-দুর্ঘটনায় আহত সঞ্জয় গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁর স্ত্রী রুবি রায় কাউন্সিলে অ্যাপোলোর ওই দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগ, এম্বোলাইজেশন না-করেও বিলে ওই চিকিৎসা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
কাউন্সিলের খবর, সঞ্জয়ের যথাযথ চিকিৎসা হয়েছিল বলে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের দাবি। আর্থিক সমস্যার জন্য তাঁকে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে, সঞ্জয়ের যকৃতের রক্তনালি থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধের ব্যবস্থা হয়নি। সেই রিপোর্ট দেখে কাউন্সিল শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘‘যা হয়েছে, সেটা কাউন্সিলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত,’’ বলেন চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন।
অ্যাপোলো-কর্তৃপক্ষ জানান, কাউন্সিলের লিখিত নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ পাওয়ার আগে মন্তব্য করতে পারছেন না। অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বক্তব্য জানতে ফোন এবং এসএমএস করা হয়েছিল। তাঁরা উত্তর দেননি।
প্রয়াতের স্ত্রী রুবিদেবী বলেন, ‘‘সঞ্জয়কে খুন করা হয়েছে। আরও কড়া শাস্তির আবেদন করব। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থা আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy