Advertisement
E-Paper

কিশোরীকে বেচেছিল প্রেমিক, ফিরিয়ে দিল যৌনপল্লিরই খদ্দের!

উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা ওই মেয়েটির বয়স তখন সবে ষোলো। প্রেমে পড়েছিল মালদহের কালিয়াচকের একটি ছেলের। বিয়ে করবে বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। কিন্তু প্রেমিক তাকে বিক্রি করে দেয় বিহারের সীতামঢ়ীর এক যৌনপল্লিতে।

মেহেদি হেদায়তুল্লা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৩:৪৪
ঘরে ফেরার পরে। —নিজস্ব চিত্র।

ঘরে ফেরার পরে। —নিজস্ব চিত্র।

ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে ঘর ছেড়েছিল কিশোরীটি। দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, কী বিভীষিকা অপেক্ষা করে রয়েছে তার জন্য।

মাসের পর মাস যায়। বিকিয়ে যেতে যেতে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছে তলানিতে ঠেকে। তবু হার মানে না সে। কেউ কি সাহায্য করবে না, জিজ্ঞাসা করে একে-ওকে।

শেষমেশ সাহায্য আসে। ঘরে ফেরে সে। শুরু হয় নতুন করে বাঁচার লড়াই।

উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা ওই মেয়েটির বয়স তখন সবে ষোলো। প্রেমে পড়েছিল মালদহের কালিয়াচকের একটি ছেলের। বিয়ে করবে বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। কিন্তু প্রেমিক তাকে বিক্রি করে দেয় বিহারের সীতামঢ়ীর এক যৌনপল্লিতে।

দু’বছর ধরে সেখানেই ছিল মেয়েটি। যৌনপল্লিতেই আলাপ হয় রেলকর্মী এক যুবকের সঙ্গে। তিনি সীতামঢ়ীরই বাসিন্দা। মেয়েটি জানাল, ওই এলাকা থেকে বেরোনোর সব রাস্তাই বন্ধ ছিল। নিজে পালাতে পারবে না বুঝতে পেরে, তার কাছে যাঁরা আসতেন, তাঁদের সাহায্য চাইত। কিন্তু তার কথায় গুরুত্ব দিতেন না কেউ-ই। ব্যতিক্রম শুধু ওই যুবক। তাঁর কথায়, ‘‘যখনই ওর কাছে যেতাম, কান্নাকাটি করত। খুব খারাপ লাগত আমার। খালি মনে হত, ওকে যদি সাহায্য করা যায়। যদি কোনও ভাবে ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।’’

যেমন ভাবা তেমন কাজ। মেয়েটির কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা জেনে সেই যুবক চলে আসেন উত্তর দিনাজপুরে। সোজা মেয়েটির বাড়িতে। বললেন, ‘‘ওর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করি। সব বুঝিয়ে বলি।’’ স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। তার পরে বৃহস্পতিবার সেই সংগঠনের কয়েক জনকে নিয়ে সীতামঢ়ী ফেরেন। ফের সেই পল্লিতে যান। তার পরে পান খাওয়ার নাম করে তরু‌ণীকে নিয়ে পালান। একগাল হেসে যুবক বললেন, ‘‘আমার বাড়ি সীতামঢ়ীতেই। এখানকার অলিগলি ওদের থেকে অনেক বেশি চিনি।’’

শনিবার বাড়ি ফিরেছে মেয়েটি। এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। তার মা বললেন, ‘‘মেয়ে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছে। ক’টা দিন যাক। ওকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবই।’’ স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব দে বলেন, ‘‘সকলের ওর পাশে দাঁড়ানো উচিত।’’

এমন একটা কাজ করে কেমন লাগছে? হাসলেন যুবক। বললেন, ‘‘দারুণ লাগছে। শেষ পর্যন্ত যে ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি, সেটাই সব থেকে বড় কথা।’’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘‘এ রকম আরও অনেক মেয়ে এই সব যৌনপল্লিতে রয়েছে। পাচার রুখতে এবং পাচার হওয়া সেই সব মেয়েকে ফেরাতে পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত।’’

কী বলছে পুলিশ? স্থানীয় থানার ওসি দিলীপকুমার রায় জানান, ঘটনার ঠিক পরেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও মেয়েটির খোঁজ মেলেনি। পুলিশ এখন তার জবানবন্দি নিয়েছে। ওসির আশ্বাস, ‘‘দোষীরা ধরা পড়বেই।’’

Women Trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy