বাঘের হানায় জখমকে দেখতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
বাঘের ভয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল। পাছে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়, তাই ভোটের আগেও জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলো এড়িয়ে যাচ্ছিলেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। বাঘ আর নেই। তাই ‘স্বস্তি’-তে তৃণমূলও। শুরু হয়েছে তেড়েফুঁড়ে প্রচারের তোড়জোড়।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, জঙ্গলমহলে বাঘের উদয়, তাকে ধরতে বন দফতরের ব্যর্থতা ভোট হারানোর আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের যে সব এলাকায় বাঘ দেখা গিয়েছিল, সেখানে রাতারাতি বিজেপির প্রভাব বাড়তে শুরু করেছিল। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে নিজেদের জমি তৈরি করছিল গেরুয়া শিবির। গোয়ালতোড়ের কাদরায় বাঘের হানায় আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। কাদরার এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে কুশকাঠি। সম্প্রতি সেখানে তৃণমূলের থেকে বিজেপির ঝান্ডাই বেশি নজরে পড়েছে। সব দেখে জেলা তৃণমূলের এক নেতার স্বীকারোক্তি, “যেখানে বাঘের ভয় ছিল, সেখানে বিজেপির ভয়ও ছিল। হঠাৎ করেই কিছু এলাকায় লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিল বিজেপি! এখন আর কোনও ভয়ই নেই!”
নেহাতই ঘটনাচক্র। তবে রবিবারই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বাঘের হানায় জখম বাগঘোরার দুই যুবকের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। পরে অজিতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাশে আছেন। দু’জনকে এই কথাই বলেছি। নববর্ষের দিনে মিষ্টিও দিয়েছি।” বাঘ খুনের পরে কি দলে স্বস্তি ফিরেছে? তৃণমূলের জেলা সভাপতির জবাব, “জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলোয় স্বস্তি ফিরেছে। মাস খানেক ধরেই গ্রামগুলোর মানুষেরা ভয়ে ভয়ে ছিলেন।”
নয়া হানাদারের ভয়ে যেন গুটিয়ে গিয়েছিল বনাঞ্চল। জঙ্গলে কাঠ, পাতা কুড়নো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভয়ে কাঁটা হয়ে গিয়েছিল একের পর এক গ্রাম। বাঘ ধরা পড়ছে না। কিন্তু বাঘের হানায় জখম হচ্ছেন শিকারে যাওয়া মানুষ। দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি চলতে থাকায় বাড়ছিল অসন্তোষ। স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়ার ভয় রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে শাসক দল গ্রামগুলোয় প্রচারেও যেতে পারছিল না।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মানছেন, “জঙ্গলমহলের কয়েকটি এলাকায় প্রচার ব্যাহত হয়েছে। এ বার জোর প্রচার হবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, “জঙ্গলে বাঘ থাকায় বেশ কিছু মানুষ নিশ্চিন্তে ছিলেন না। তবে জঙ্গলের বাঘের থেকে আমাদের প্রচার বেশি ব্যাহত হয়েছে তৃণমূলের গুন্ডাদের জন্য।”
বাঘ নেই। বাঘ-রাজনীতিও কি এ বার ফিকে হবে— প্রশ্ন জঙ্গলমহলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy